পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/৩৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ ভিতরে একটা কথা আছে—কাহাকেও ভালবাসিলে মনে হয়, সেও বুঝি আমাকে ভালবাসে, আমাকে কেন বাসিবে না ? অবশ্য এ-কথা প্রতিপন্ন করা যায় না । একদিন ললিতমোহন প্রাচীরে উঠিয়াছে। এমন সময় চন্দ্রবাবুর চোখে পড়িল । চন্দ্রবাবু দারোয়ানকে হাকিয়া বলিলেন,—কো পাকড়ে । দারোয়ান প্রথমে বুঝিতে পারিল না, কাহাকে ধরিতে হইবে, পরে যখন বুঝিল, ললিতবাবুকে তখন সেলাম করিয়া তিন হাত পিছাইয়া দাড়াইল । চন্দ্রবাবু পুনরায় চীৎকার করিয়া বলিলেন,—কো পাকড়কে থানামে দেও। দারোয়ান আধা বাঙলা আধা হিন্দীতে বলিল, হামি নেহি পারবে বাবু। ললিতমোহন ততক্ষণে ধীরে ধীরে প্রাচীর টপকাইয়া প্রস্থান করিল । সে চলিয়া যাইলে চন্দ্রবাবু বলিলেন, কাহে নেহি পাকুড়া ? দারোয়ান চুপ করিয়া রহিল। একজন মালী ললিতকে বিলক্ষণ চিনিত, সে বলিল, ও বেটা ভোজপুরীর সাধ্য কি ললিতবাবুকে ধরে ? ওর মত চারটে দারোয়ানের মাথা ওর এক ঘুষিতে ভেঙে যায়। দারোয়ানও তাহ অস্বীকার করিল না, বলিল, বাবু, নোকরি করনে আয়া, না জান দেনে আয়া ? চন্দ্রবাৰু কিন্তু ছাড়িবার পাত্র নহেন। তিনি ললিতের উপর পূর্ব হইতেই বিলক্ষণ চটা ছিলেন, এখন সময় পাইয়া, সাক্ষী জুটাইয়া অনধিকার-প্রবেশ এবং আরও কত কি অপরাধে আদালতে নালিশ করিলেন। জগবন্ধুবাবু ও তাহার স্ত্রী উভয়েই এই মকদ্দমা করিতে নিষেধ করিলেন ; কিন্তু চন্দ্রনাথ কিছুতেই শুনিলেন না। বিশেষ মৰ্ম্মপীড়িত অনুপমা জিদ করিয়া বলিল যে, পাপীকে শাস্তি না দিলে তাহার মন কিছুতেই সুস্থির হইবে না । ইনস্পেক্টর বাটতে আসিয়া অনুপমার এজাহার লইল । অনুপমা সমস্তই ঠিকঠাক বলিল। শেষে এমন দাড়াইল যে, ললিতের জননী বিস্তর অর্থব্যয় করিয়াও পুত্রকে কিছুতেই বাচাইতে পারিলেন না। তিন বৎসর ললিতমোহনের সশ্রম কারাবাসের আদেশ হইয়া গেল । বি. এ. পরীক্ষার ফল বাহির হইয়াছে স্বরেশচন্দ্র মজুমদার একেবারে প্রথম হইয়াছে। গ্ৰামময় মুখ্যাতির একটা রৈ রৈ শব্দ পড়িয়া গিয়াছে। অনুপমার জননীর আনন্দের সীমা নাই। আনন্দে স্বরেশের জননীকে গিয়া বলিলেন, নিজের কথা নিজে বলতে নেই, কিন্তু দেখ দেখি আমার মেয়ের পয় ! স্বরেশের মা সহাস্তে বলিলেন, তা ত দেখছি। Woos