পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/৩৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রছ মানিয়া লইতেন। কিন্তু তাহার স্থখ-ভোগ করিবার অধিকদিনও জার বাকী ছিল না। একে জীর্ণ জীর্ণ শরীর, তাহার উপর পুরাতন সখা কাসরোগ অনেকদিন হইতে তাহার শরীরে আশ্রয় গ্রহণ করিয়া বসিয়া আছে। প্রতি বৎসরই শীতকালে তাহাকে স্বৰ্গে লইয়া যাইবার জন্ত টানাটানি করিত, এবার শীতকালে বিষম টানাটানি করিতে লাগিল। জগবন্ধুবাবু দেখিলেন, যক্ষ্মা রামদুলালের অস্থিমজ্জায় প্রতি গ্রন্থিতে গ্রন্থিতে ছড়াইয়া পড়িয়াছে। পাড়াগায়ে সুচিকিৎসা হইবে না জানিয়া কলিকাতায় পাঠাইয়া দিলেন। সেখানে কিছু স্কুচিকিৎসার পর সতী-সাথী অনুপমার কল্যাণে ছুটি বৎসর ঘুরিতে না ঘুরিতে সদানন্দ রামদুলাল সংসার ত্যাগ করিলেন। - চতুর্থ পরিচ্ছেদ বৈশ্বব্য তথাপি অনুপম একটু কাদিল। স্বামী মরিলে বাঙালীর মেয়েকে কাদিতে হয়, তাই কালি। তাহার স্ব-ইচ্ছায় সাদা পরিয়া সমস্ত অলঙ্কার খুলিয়া ফেলিল। জননী কাজিতে কাদিতে বলিলেন, আহ, তোর এ বেশ ত আমি চোখে দেখতে পারি না, অন্ততঃ হাতে এক জোড়া বালাও রাখ, । তা হয় না, বিধবার অলঙ্কার পরতে নেই। কিন্তু তুই কচি মেয়ে। তাহা হোক, বাঙালী মেয়ে বিধবা হইলে কচি বুড়ো সমস্ত এক হইয়া যায়। জননী আর কি বলিবেন ? শুধু কাদিতে লাগিলেন। অনুপমার বৈধব্যে লোকে নূতন করিয়৷ শোক করিল না। দুই-এক বৎসরেই সে যে বিধবা হইবে তাহ সকলেই জানিত । কেহ বলিল, মড়ার সঙ্গে বিয়ে দিলে কি আর সধবা থাকে ? কর্তাও এ-কথা জানিতেন, গৃহিণীও বুঝিতেন ; তাই শোকট। নূতন করিয়া হইল না। যাহা হইবার তাহা বিবাহরাত্রেই হইয়া গিয়াছে—স্বামীকে ভালবালিল না, জানিল না, শুনিল না, তথাপি অনুপমা কঠোর বৈধব্যব্রত পালন করিতে লাগিল। রাত্রে জলস্পর্শ করে না, দিনে একমুষ্টি স্বহস্তে সিদ্ধ করিয়া লয়, একাদশীর দিন নিরন্থ, উপবাস করে। আজ পূর্ণিমা, কাল অমাবস্তা, পরশু শিবরাজি, এমনি করিয়া মাসের পর দিন সে কিছু খায় না। কেহ কোনও কথা বলিলে বলে, আমার ইহকাল গিয়াছে, এখন পরকালের কাজ করিতে দাও। এত কিন্তু সহিবে কেন ? উপবাসে জনিয়মে আহুপমা শুকাইয়া অৰ্দ্ধেক হইয়া গেল। দেখিয়া দেখিয়া গৃহিণী ভাবিলেন, এইৰায় সে মরিয়া যাইবে। কর্তাও ভাবিলেন, তাহ বড় বিচিত্র নহে। তাই একদিন স্ত্রীকে ভাকিয়া বলিলেন, অমুর আবার বিয়ে দিই । - - H8’•