পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রই ব্যস্তভাবে ঘরে ঢুকিয়া বললেন, তাই ত, একটু দেরি হয়ে গেল—আর এই বেয়ারা ব্যাট যে থেকে থেকে কোথায় যায় তার ঠিকানা নেই। মা অচল—ও কি রে, তোর কি কোন অমুখ করেচে ? মুখ শুকিয়ে যেন একেবারে— অচলা কোনমতে একটুখানি হাসিবার চেষ্টা করিয়া বলিল, না বাবা, অসুখ করবে কেন ? তবু মাথা-ধরা-টরা ? যে গরম পড়েচে, তা— না, আমি বেশ আছি বাবা, আমার কিছুই হয়নি । কেদারবাবু নিশ্চিন্ত হইয়া বললেন, তবু ভাল। মুখ দেখে আমার ভয় লেগে গিয়েছিল। তবে, তুমি একটু দেখ দেখি মা, যদি– অচলা বলিল, বেশ ত বাবা, আমি এক মিনিটে সমস্ত যোগাড় করে দিচ্চি। কিন্তু এইমাত্র আমি জিজ্ঞাসা করছিলুম মুরেশবাবুকে—আমাদের এখানে নাওয়া-খাওয়া করতে র্তার ত আপত্তি নেই ? কেদারবাবু আশ্চৰ্য্য হইয়া বলিলেন, আপত্তি কেন থাকবে ? না—না স্বরেশ, আমি ত তোমাকে বলেইচ যে, একদিনেই তোমাকে আমি ঘরের ছেলে মনে করেচি । এ বাড়ি তোমার নিজের বাড়ি । মেয়ের দিকে চাহিয়া সগৰ্ব্বে কহিলেন, আর তাই যদি না হবে অচলা, আমাদের উদ্ধার করবার জন্য ভগবান ওঁকে পাঠাবেন কেন ? কিন্তু আর দেরি হবে না বাবা, এসো আমার সঙ্গে—মানের ঘরটা তোমাকে দেখিয়ে দিই গে । কিন্তু সেই যে মুরেশ, কেদারবাবু প্রবেশ করা পৰ্য্যন্ত মাথা হেঁট করিয়াছিল, কিছুতেই আর সে মাথা সোজা করিয়া তুলিয়া ধরিতে পারিল না । অচলা বলিল, কাজ কি বাবা পীড়াপীড়ি করে । আমাদের ব্রাহ্ম-বাড়িতে খেতে হয়ত ওঁর বিশেষ বাধা আছে । তা ছাড়া অপ্রবৃত্তির ওপর খেলে অমুখ করতেও পারে । কেদারবাবু একেবারে মুসড়িয়া পড়িলেন। স্বত্বেশ বড়লোকের ছেলে—স্বাধীন। ঘরের গাড়ি করিয়া যাতায়াত করে । তাহাকে খাওয়াইয়া মাখাইয়া যেমন করিয়া হোক আত্মীয় করা যে র্তাহার চাই-ই ; হঠাৎ তাহার আনত মুখের একাংশে নজর পড়ায় কেদারবাবু বিস্ময়ে একেবারে চমকিয়া উঠিলেন—অ্যা! একি হয়েচে মুরেশ ? শুকিয়ে সমস্ত মুখখানা যে একেবারে কালিবর্ণ হয়ে গেছে । ওঠে, ওঠেী—মাথায় মুখে জল দিতে আর এক মিনিট বিলম্ব ক’রো না । বলিয়া হাত ধরিয়া একপ্রকার জোর করিয়া তুলিয়া লইয়া গেলেন । Հեր