পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/৩৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ প্রতিপন্ন করিতেছেন যে, যে-মেয়ের ভাই ছিল না, সে মেয়ের সহিত তখনকার দিনে বিবাহ নিষিদ্ধ ছিল। এবং বলিতেছেন, অথচ, আজকাল এই বিবাহই সৰ্ব্বাপেক্ষা সস্তোষজনক । কারণ, বিষয়-আশয় পাওয়া যায়। যদিচ, এতগুলি শাস্ত্রীয় শ্লোক ও তাহার অর্থাদি দেওয়া সত্বেও মোটাবুদ্ধিতে আসিল না, ভাই না হওয়ায় বোনের অপরাধ কি এবং কেনই বা সে ত্যাজ্য হইয়াছিল, কিন্তু এখন যখন ইহাই সৰ্ব্বাপেক্ষা বাঞ্ছনীয়, তখন ইহাকেও একটা পরিবর্তন বলিয়াই গণ্য করিতে হইবে। তবেই দেখা যাইতেছে, (১) তখন মেয়ের বিবাহের বয়স নির্দিষ্ট ছিল না, এখন ইহাই হইয়াছে বাপ-মায়ের মৃত্যুবাণ । (২) স্বেচ্ছাকৃত উপঢৌকন দাড়াইয়াছে বাস্তুভিটা বেচা এবং (৩) নিষিদ্ধ কন্যা হইয়াছেন সবচেয়ে-স্বসিদ্ধ মেয়ে। ভববিভূতিবাবু বলিবেন, তা হোক না, কিন্তু এখনও ত বরকে সেই মেয়ের বাড়িতে গিয়াই বিবাহ করিতে হয় এবং শোভাযাত্রা করিয়া ঘরে ফিরিতে হয়। এ ত আর বৈদেশিক সভ্যতার সংঘর্ষ একতিল পরিবর্তিত করিতে পারে নাই ? তা পারে নাই সত্য, তবুও মনে পড়ে, সেই যে কে একজন খুব খুশী হইয়া বলিয়াছিল,— জন্নবস্ত্রের দুঃখ ছাড়া আর দুঃখ আমার সংসারে নেই!” আবার ইহাই সব নয়। “বিবাহিত পত্নী যে-গৃহের প্রধান অঙ্গ,—গৃহিণীর অভাবে ষে গৃহ জীর্ণারণ্যের তুল্য, তাহা ভট্টাচাৰ্য্য মহাশয় “গৃহিণীং গৃহমুচ্যতে"— এই প্রসিদ্ধ প্রবাদবাক্য হইতে সম্প্রতি অবগত হইয়াছেন। আবার ঋগ্বেদ পাঠেও প্রবাদটির স্বপুরাতনত্বই সুচিত হইয়াছে। যথা— ৩ ম, ৫৩ স্থ, ৪ ঋক্ ] “জায়েদস্তং মঘবস্তসেছু যোনিঃ” অর্থাৎ, হে মঘবন–জায়াই গৃহ, জায়াই যোনি । সুতরাং বহু প্রাচীনকাল হইতেই হিন্দুগণ রমণীগণের প্রতি অাদর ও সম্মান প্রদর্শন করিয়া আসিতেছেন। আবার র্তাহাদের পত্নী কিরূপ মঙ্গলময়ী, তাহা—“কল্যাণীর্জায়া.গুহে তে” [ ত ম, ৫৩ স্থ, ৬ ঋক্ ] হইতে স্পষ্টই প্রতীত হয়। স্বতরাং— “কিন্তু, তথাপি, বৈদেশিকগণ কেন যে হিন্দুগণের উপর রমণীগণের প্রতি কঠোর ব্যবহারের জন্য দোষারোপ করেন, তাহ। তাহারাই জানেন ।” এই সকল প্রবন্ধ ও মতামতের যে প্রতিবাদ করা আবশ্বক সে কথা অবশ্ব কেহই বলিবেন না। আমিও একেবারেই করিতাম না, যদি না ইহা আমার প্রবন্ধের ভূমিক-হিসাবেও কাজে লাগিত। তথাপি প্রতিবাদ করিতে আমি চাহি না—কিন্তু ইহারই মত “বড়ই কাতরকণ্ঠে" ডাকিতে চাহি—ভগবান! এই সমস্ত শ্লোক আওড়ানোর হাত হইতে এই হতভাগ্য দেশকে রেহাই দাও । ঢের প্লায়শ্চিত্ত করাইয়া লইয়াছ, এইবার একটু নিষ্কৃতি দাও —শ্ৰীমতী অনিল দেবী। ७१