পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গৃহদাই জচলা সংবাদপত্রের সেই স্থানটা খুজিতে খুজিতে বলিল, বোধ করি, ইনি আমাদেরই স্বরেশবাবু। কেদারবাৰু বিস্ময়ে দুই চক্ষু প্রসারিত করিয়া বলিয়া উঠিলেন, আমাদের স্বরেশবাৰু? কি করেচেন তিনি ? কোথায় তিনি ? আচল উঠিয়া আসিয়া সংবাদপত্রের সেই স্থানটি পিতার হাতে তুলিয়া দিয়া বলিল, পড়ে দেখ না বাবা । কেদারবাবু চশমার জন্য পকেট হাতড়াইয়া বলিলেন, চশমাটা হয়ত আমার ঘরেই ফেলে এসেচি। তুমি পড় না মা, ব্যাপারটা কি শুনি ? অচলা পড়িয়া শুনাইল, ফয়জাবাদ সহরের জনৈক পত্রপেরক লিখিতেছেন, সেদিন সহরের দরিদ্র-পল্লীতে ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ড হইয়া গিয়াছে ! একে প্লেগ, তাহাতে এই দুর্ঘটনায় দুঃখী লোকের দুঃখের আর পরিসীমা নাই। কিছুদিন হইতেই স্বরেশ নামে একটি ভদ্র যুবক এখানে আসিয়া অর্থ দিয়া, ঔষধ-পথ্য দিয়া, নিজের দেহ দিয়া রোগীর সেবা করিতেছিলেন । বিপদের সময় তিনি উপস্থিত হইয়া শুনিতে পান, রোগশয্যায় পড়িয়া কোন স্ত্রীলোক একটি প্রজ্বলিত গৃহের মধ্যে আবদ্ধ হইয়া আছে—তাহাকে উদ্ধার করিবার আর কেহ নাই । # সংবাদদাত অতঃপর লিখিয়াছেন, ইহার প্রাণরক্ষা করিতে কি করিয়া এই অসমসাহসী বাঙালী যুবক নিজের প্রাণ তুচ্ছ করিয়া জলন্ত অগ্নিরাশির মধ্যে প্রবেশ করিয়া, ইত্যাদি ইত্যাদি— পড়া শেষ হইয়া গেল। কেদারবাৰু অনেকক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া থাকিয়া একটা নিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, কিন্তু এ কি আমাদের মুরেশ বলেই তোমার মনে হয় ? অচলা শাস্তভাবে বলিল, ই বাবা, ইনি আমাদেরই স্বত্বেশবাবু। কেদারবাবু আর একবার চমকিয়া উঠিলেন। বোধ করি, নিজের অজ্ঞাতসারেই অচলার মুখ দিয়া এই 'আমাদেরই কথাটার উপর একবার একটা অতিরিক্ত জোর প্রকাশ পাইয়াছিল। হয়ত সে শুধু একটা নিশ্চিত বিশ্বাস জানাইবার জন্যই, কিন্তু কেদারবাবুর বুকের মধ্যে তাহ আর একভাবে বাজিয়া উঠিল ; এবং মজ্জমান ব্যক্তি যেভাবে তৃণ অবলম্বন করিতে দুই বাহু বাড়াইয়া দেয়, ঠিক তেমনি করিয়া বৃদ্ধ পিতা কস্তার মুখের এই একটিমাত্র কথাকেই নিবিড় আগ্রহে বুকে চাপিয়া ধরিলেন । এই একটি কথাই তাহার কানে কানে, চক্ষের নিমিষে কত কি অসম্ভব সম্ভাবনার স্বারোদঘাটনের সংবাদ শুনাইয়া গেল, তাহার সীমা রহিল না। র্তাহার মুখখানা আজ এতদিন পরে অকস্মাৎ আশার আনন্দে উদ্ভাসিত হইয়া উঠিল। বলিলেন, আচ্ছা মা, তোমার কি মনে হয় ন!— - ¢ ዓ १श-v