পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

श्रृश्नोश् এ বুড়োও বড় কম শোক পাবে না। তা সে যাক, অন্ততঃ আমি যে ক’টা দিন বেঁচে আছি, সে কাটা দিন নিজের শরীরের একটু যত্ন রেখে স্বরেশ, এই আমার একান্ত অনুরোধ । ঘড়িতে রাত্রি দশটা বাজিল। বাড়ি ফিরিবার উদ্যোগ করিয়া স্বরেশ হঠাৎ হাত জোড় করিয়া বলিল, আমার একটা প্রার্থনা আছে কেদারবাবু, মহিমের বিয়ে ত আমার ওখান থেকেই হবে স্থির হয়েচে ; কিন্তু সে ত পরশু । কাল রাত্রেও এই অধমের বাড়িতেই একবার পায়ের ধূলো দিতে হবে—নইলে বিশ্বাস হবে না যে, আমি ক্ষমা পেয়েচি। বলুন, এ ভিক্ষে দেবেন ? বলিয়া সে অকস্মাৎ নীচু হইয়। কেদারবাবুর পায়ের ধুলা লইতে গেল। কেদারবাবু শশব্যস্ত হইয়া বোধ করি বা তাহাকে জোর করিয়াই নিরস্ত করিতে গিয়াছিলেন—অকস্মাং তাহার অস্ফুট কাতরোক্তিতে লাফাইয়া উঠিলেন । পিঠের খানিকটা দগ্ধ হওয়ায় ব্যাণ্ডেজ করা ছিল, একটা শার্ল গায়ে দিয়া এতক্ষণ সুরেশ ইহা গোপন করিয়া রাখিয়াছিল। না, জানিয়া টানাটানি করিতে গিয়া, তিনি ব্যাণ্ডেজটাই সরাইয়া ফেলিয়াছিলেন। এখন অনাবৃত ক্ষতের পানে চাহিয়া বৃদ্ধ সভয়ে চীৎকার করিয়া উঠিলেন । * তড়িৎ-স্পৃষ্টের মত উঠিয়া আসিয়া অচলা ব্যাণ্ডেজ ধরিয়া ফেলিয়া বলিল, ভয় কি, আমি ঠিক করে বেঁধে দিচ্চি। বলিয়া তাহাকে ওধারের সোফার উপর বসাইয়া দিয়া সযত্বে সাবধানে ব্যাণ্ডেজট যথাস্থানে বাধিয়া দিতে প্রবৃত্ত হইল । কেদারবাৰু তাহার চৌকির উপর ধপ, করিয়া চোখ বুজিয়া বসিয়া পড়িলেন— বছুক্ষণ পৰ্য্যন্ত আর র্তাহার কোনরূপ সাড়া-শব্দ রহিল না । কোচের পিঠের উপর দুই কমুয়ের ভর দিয়া পিছনে দাড়াইয়া অচলা নিঃশব্দে ব্যাণ্ডেজ বাধিতেছিল। দেখিতে দেখিতে তাহার দুই চক্ষু অশ্রপুর্ণ হইয়া উঠিল এবং অনতিকাল পরেই মুক্তার আকারে একটির পর একটি নীরবে ঝরিয়া পড়িতে লাগিল। স্বরেশ ইহার কিছুই দেখিতে পাইল না ; এদিকে তাহার খেয়ালই ছিল না। সে শুধু নিমীলিতচক্ষে স্থির হইয়া বসিয়া, তাহার অসীম প্রেমাম্পদের কোমল হাত দুখানির করুশম্পর্শ বুকের ভিতর অনুভব করিতে লাগিল। কোনমতে চোখের জল মুছিয়া ফেলিয়া অচলা এক সময়ে চুপি চুপি বলিল, আজ আমার কাছে আপনাকে একটা প্রতিজ্ঞা করতে হবে। স্বরেশ ধ্যান ভাঙিয়া চকিত হইয়া উঠিল ; কিন্তু সেও তেমনি মৃত্নশ্বরে প্রশ্ন করিল, কি প্রতিজ্ঞ ? এমন করে নিজের প্রাণ আর নষ্ট করতে পারবেন না । 曾》