পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*ারং-সাহিত্য-সংগ্ৰই তাই ত, ঘর-দোর দেখে মনে হচ্ছে, বাড়িতে লক্ষ্মীর আবির্ভাব হয়েচে, খাটুনি বলছি। ভাই সেজদি--যেদিন স্বামী-পুত্র ঘর-কন্না নিয়ে নাবার-খাবার সময় পাবে না, শুধু তখুনি এই মেয়েমানুষ-জন্মটা সার্থক হবে। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করি, একদিন যেন তোমার সেদিন আসে—এখুনি খাটুনির হয়েচে কি গিন্নি। বলিয়া হাসিতে গেল বটে, কিন্তু তাহার ঠোঁট কঁাপিয়া গেল । হরির মা হঠাৎ ভ্যাক্ করিয়া কাদিয়া ফেলিয়া বলিল, সেই আশীৰ্ব্বাদ কর দিদি, শুধু সেই আশীৰ্ব্বাদই কর । তাহার অচলার মাকে মনে পড়িয়া গিয়াছিল—সেই সাধ্বী অত্যন্ত অসময়ে যখন স্বৰ্গারোহণ করেন, তখন একরত্তি মেয়েকে হরির মায়ের হাতেই সঁপিয়া দিয়া গিয়াছিলেন। সেই মেয়ে এখন এতবড় হইয়া স্বামীর ঘর করিতে আসিয়াছে । * মৃণাল তাহাকে ধমক দিয়া বলিল, আ মর! ছিচ, কাছুনি মাগী কঁদিস কেন ? হরির মা চোখ মুছিতে মুছতে বলিল, কঁাদি কি সাধে দিদি । তোমার কথা শুনে কান্না যে কিছুতে ধরে রাখতে পারিনে। মাইরি বলচি, তুমি না এসে পড়লে এ-বাড়িতে একটা রাতও যে আমাদের কি করে কাটত, তা আমি ভেবে পাইনে । আজ ছয়দিন হইল মৃণাল এ-বাটতে আসিয়াছে । আসিয়া পৰ্য্যন্ত বাড়ি-ঘরদ্বার হইতে আরম্ভ করিয়া মানুষগুলোর পর্য্যন্ত চেহারা বদলাইয়া দিবার কার্য্যেই নিজেকে ব্যাপৃত রাখিয়াছে। কিন্তু তাহার সব কাজ-কৰ্ম্ম, হাসি-ঠাট্টার মধ্যে হইতে একটা যাই যাই ভাব অচলাকে পীড়া দি েছিল। কারণ মুণালের কাজে কথায়, আচারে-ব্যবহারে এত বড় একটা সহজ আত্মীয়তা ছিল, যাহার আড়ালে স্বচ্ছন্দে দাড়াইয়া অচলা উকি মারিয়া তাহার নূতন জীবনের অচেনা ঘর-কন্নাকে চিনিয়া লইবার সময় পাইতেছিল এবং ইহার চেয়েও একটা বড় জিনিসকে তাহার ভাল করিয়া এবং বিশেষ করিয়া চিনিবার কৌতুহল হইয়াছিল, সে স্বয়ং মৃণালকে। তাহার সাংসারিক অবস্থা যে স্বচ্ছল নহে, তাহা তাহার সম্পূর্ণ অলঙ্কার-বর্জিত হাত দুখানির পানে চাহিলেই টের পাওয়া যায় । তাহাতে ভগ্ন-স্বাস্থ্য বুদ্ধ স্বামী—কোন দিক দিয়াই যাহাকে তাহার উপযুক্ত বলিয়া অচলার মনে হয় না ; তাহার উপর বাড়িতে পরিশ্রমের অন্ত নাই—জরাজীর্ণ শাশুড়ী মর মর অবস্থায় অহৰ্নিশ গলায় ঝুলিতেছে; কারণে অকারণে তাহার বকুনি-ঝকুনির বিরাম নাই—এ কথা সে মৃণালের নিজের মুখেই শুনিয়াছে—অথচ কোন প্রতিকূলতাই যেন দুঃখ দিয়া এই মেয়েটিকে তাহার জীবন-যাত্রার পথে অবসন্ন করিয়া বসাইখা দিতে পারে না । হৃদয়ের আনন্দ-নিরানন্দ ছাড়া বাহিরের কোন কিছুর যেন অস্তিত্ব নাই—এমনি এই মূৰ্ধ পাড়াগায়ের মেয়েটার ভাব। অন্ধক্ষণ সঙ্গে সঙ্গে থাকিয়া সে বেশ বুঝিতেছিল, পদ্ম যেমন পাকের মধ্যে জন্মলাভ করিয়াও মলিনতার অতীত, ঠিক তেমনি যেন এই ఆ