পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (সপ্তম সম্ভার).djvu/৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য সংগ্ৰহ এখানে আসা অবধি মৃণাল ও অচলা একসঙ্গে আহারে বসিত। দুপুরবেলা হরির মাকে ডাকিতে পাঠাইয়া দিয়া অচলা মৃণালের জন্য অপেক্ষা করিতেছিল, সে ফিরিয়া আসিয়া কহিল, মৃণালদিদির জরের মত হয়েছে, তিনি খাবেন না। অচলা কোন কথা না কহিয়া মৃণালের ঘরে আসিয়া ঢুকিল। মৃণাল চোখ বুজিয়া বিছানায় গুইয়াছিল ; অচলা কহিল, খাবে চল মৃণালদিদি। মৃণাল চাহিয়া দেখিয়া একটুখানি হাসিয়া বলিল, তুমি খাওগে ভাই সেজদি, আমার শরীর ভাল নেই! অচলা শুষ্ককণ্ঠে প্রশ্ন করিল, কি হয়েছে? জয় ? মৃণাল কহিল, তাই মনে হচ্চে । আজ উপোস করলেই সেরে যাবে। অচলা হেঁট হইয়া হাত দিয়া মৃণালের কপালের উত্তাপ অনুভব করিয়া বলিল, আমি অত বোকা নই মৃণালদিদি, খাবে চল । মৃণাল ঘাড় নাড়িয়া বলিল, মাইরি বলচি সেজদি, আমার খাবার জো নেই। কেন তুমি আবার কষ্ট করে ডাকতে এলে ভাই। বরং চল, আমি না হয় গিয়ে তোমার স্বমুখে বসচি। অচলা কঠিন হইয়া কহিল, একজন অভুক্ত বন্ধুকে মুখের সামনে বসিয়ে রেখে খাবার শিক্ষা আমরা পাইনি মৃণালদিদি। মৃণাল তথাপি হাসিবার প্রয়াস করিয়া বলিল, আর বন্ধুর যদি ভোজনের উপায় না থাকে, তা হলে ? অচলা তেমনিভাবে জবাব দিল, নেই কেন আগে শুনি ? তোমার জর হয়নি, হয়েচে রাগ | নিজে না খেয়ে আমাকেও শুকোবে, এই যদি তোমার ইচ্ছে হয়ে থাকে স্পষ্ট করে বল আমি আর তোমাকে বিরক্ত করব না । মৃণাল তাড়াতাড়ি উঠিয়া বসিয়া ঝোকের মাথায় বলিয়া ফেলিল, স্বামীর দিব্যি করে বলচি সেজদি, আমি এতটুকু রাগ করিনি। কিন্তু আমার খাবার জো নেই। চল দিদি, তোমাকে কোলে করে বসে খাওয়াই গে । অচলা কহিল, তা হলে জর-টর নয়? ওটা শুধু ছল। মৃণাল চুপ করিয়া রহিল। অচলা নিজেও কিছুক্ষণ স্তন্ধভাবে থাকিয়া একটা নিশ্বাস ফেলিয়া আস্তে আস্তে বলিল, এতক্ষণে বুঝলুম। কিন্তু গোড়াতেই যদি মুখ ফুটে বলে দিতে মৃণালদিদি, আমার ছোয়া তুমি ঘৃণায় মুখে দিতে পারবে না, তা হলে এই অন্যায় জিদ করে তোমাকে কষ্ট দিতাম না, নিজেও দাসী-চাকরের সামনে লজ্জায় পড়তুম না ; তা সে যাক—আমাকে মাপ ক’রো ভাই, কিন্তু দুধ ত ছোয়া যায় না শুনেচি, তাই এক বাটি এনে দি—আর যন্থ গিয়ে দোকান থেকে কিছু সন্দেশ কিনে আমুক। কি বল ?