পাতা:শিক্ষার বিকিরণ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিক্ষার বিকিরণ

 মধ্য এসিয়ার মরুভূমিতে যে সব পর্য্যটক প্রাচীন যুগের চিহ্ন সন্ধান করেচেন তাঁরা দেখেচেন সেখানে কত সমৃদ্ধ জনপদ আজ বালি চাপা পড়ে হারিয়ে গেছে। এককালে সে সব জায়গায় জলের সঞ্চয় ছিল, নদীর রেখাও পাওয়া যায়। কখন রস এল শুকিয়ে, এক পা এক পা করে এগিয়ে এল মরু, শুষ্ক রসনা মেলে লেহন করে নিল প্রাণ, লোকালয়ের শেষ স্বাক্ষর মিলিয়ে গেল অসীম পাণ্ডুরতার মধ্যে। বিপুল সংখ্যক গ্রাম নিয়ে আমাদের যে-দেশ, সেই দেশের মনোভূমিতেও রসের জোগান আজ অবসিত। যে-রস অনেক কাল থেকে নিম্নস্তরে ব্যাপ্ত হয়ে আছে তাও দিনে দিনে শুষ্ক বাতাসের উষ্ণ নিঃশ্বাসে উবে যাবে, অবশেষে প্রাণনাশা মরু অগ্রসর হয়ে তৃষ্ণার অজগর সাপের মতো পাকে পাকে গ্রাস করতে থাকবে আমাদের এই গ্রামে-গাঁথা দেশকে। এই মরুর আক্রমণটা আমাদের চোখে পড়চে না, কেননা বিশেষ শিক্ষার গতিকেই দেশ-দেখা চোখ আমরা হারিয়েচি, গবাক্ষলণ্ঠনের আলোর মতো আমাদের সমস্ত দৃষ্টির লক্ষ্য কেন্দ্রীভূত শিক্ষিত সমাজের দিকে।

 আমি একদিন দীর্ঘকাল ছিলুম বাংলা দেশের গ্রামের নিকটসংস্রবে। গরমের সময়ে একটা দুঃখের দৃশ্য পড়ত চোখে। নদীর জল গিয়েচে নেমে, তীরের মাটি গিয়েচে