পাতা:শিক্ষার বিকিরণ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিক্ষার বিকিরণ

দ্বারী বললে, ঐ যে তোমার কাপড়ের নীচে লুকোনো, ঐ যে তোমার আপনি, ওটা যোলো আনা আমার রাজার পাওনা, ফাঁকি দিয়ে রেখে নিজেরই জিম্মায়। এই বলতে বলতে মহা ঢাক ঢোল বেজে উঠল, চলল পরচুলো ঝাঁকানি দিয়ে ঘন ঘন নাচ। যেন ঐখানটা পাঠের প্রধান অংশ, অধ্যাপকমশায় পেন্সিলের মোটা দাগ ডবল করে টেনে দিলেন। রাত এগোতে লাগলো, দুপর পেরিয়ে একটা বাজে, শ্রোতারা স্থির হয়ে বসে শুনচে। সব কথা স্পষ্ট বুঝুক বা না বুঝুক এমন একটা কিছুর স্বাদ পাচ্চে যেটা প্রতিদিনের নীরস তুচ্ছতা ভেদ করে পথ খুলে দিলে চিরন্তনের দিকে।

 এমনি কতকাল চলেচে দেশে, বারবার বিচিত্র রসের যোগে লোকে শুনেচে ধ্রুব প্রহলাদের কথা, সীতার বনবাস, কর্ণের কবচদান, হরিশ্চন্দ্রের সর্ব্বস্বত্যাগ। তখন দুঃখ ছিল অনেক, অবিচার ছিল, জীবনযাত্রার অনিশ্চয়তা ছিল পদে পদে, কিন্তু সেই সঙ্গে এমন একটি শিক্ষার প্রবাহ ছিল যাতে করে ভাগ্যের বিমুখতার মধ্যে মানুষকে তার আন্তরিক সম্পদের অবারিত পথ দেখিয়েচে, মানুষের যে-শ্রেষ্ঠতাকে অবস্থার হীনতায় হেয় করতে পারে না তার পরিচয়কে উজ্জ্বল করেচ। আর যাই হোক, আমেরিকান টকির দ্বারা এ কাজটা হয় না।