পাতা:শিক্ষার বিকিরণ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিক্ষার বিকিরণ

 অন্য সকল দেশে আবশ্যিক শিক্ষার প্রবর্ত্তন হয়েছে অল্পদিন হোলো। আমাদের দেশে যে-জনশিক্ষা তাকে আবশ্যিক বলব না, তাকে বলব স্বৈচ্ছিক। সে অনেক কালের। তার পশ্চাতে কোনো আইন ছিল না, তাগিদ ছিল না, তার স্বতঃসঞ্চার ছিল ঘরে ঘরে যেমন রক্তচলাচল হয় সর্ব্বদেহে।

 তার পরে সময়ের পরিবর্ত্তন হোলো। ইতিমধ্যে শিক্ষিত সমাজ যখন রাজদ্বারের দিকে মুখ ফিরিয়ে মন্ত্রিসভায় প্রবেশাধিকারের আবেদন কখন বা করুণকণ্ঠে কখন বা কৃত্রিম আক্রোশে পেশ করছিলেন তখন তাঁদের পিছনের দিকে গ্রামে গ্রামে পিপাসার জল এলো পাঁকের কাছে নেমে, এদিকে সহরে সহরে দ্বারে দ্বারে ঝরতে লাগল কলের জল। আমরা বিস্মিত হয়ে বললেম, এ’কেই বলে উন্নতি। দেশের যেটা বৃহৎরূপ সেটা লুকোলো আমাদের অগোচরে, ঘে-প্রাণ যে-আলো দেশের সর্ব্বত্র বিকীর্ণ ছিল সেটা প্রতিসংহৃত হোলো ছোটো ছোটো কেন্দ্রে।

 একালে যাকে আমরা এডুকেশন বলি তার আরম্ভ সহরে। তার পিছনে ব্যবসা ও চাকরি চলেচে আনুযঙ্গিক হয়ে। এই বিদেশী শিক্ষাবিধি রেল-কামরার দীপের মতো। কামরাটা উজ্জ্বল, কিন্তু যে যোজন যোজন পথ গাড়ি চলেছে ছুটে সেটা অন্ধকারে লুপ্ত।