পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮
শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত

না—কিন্তু বংশ মর্য্যাদায় উচ্চ এবং রূপে অতুলনীয় সুন্দরী বলিয়া আমার মাতাকে পুত্র-বধু করিবার জন্য পিতামহ বিশেষ আগ্রহান্বিত হইয়াছিলেন। আমার জন্মের দুই বৎসর পর আমার পিতামহের মৃত্যু হয়।—ঠাকুরদাদার কোলের সুখলাভ যে আমার ভাগ্যে ঘটিয়াছিল—কেবল মাত্র কল্পনাতেই সেই স্মৃতি জাগিয়া আছে।

 কন্যা বলিয়া আমি শিশুকালে অনাদৃত হই নাই। পিতার বন্ধুগণ কেহ কেহ বলিলেন, “প্রথম কন্যাসন্তান, সৌভাগ্যের লক্ষণ”। কথাটা হাস্য পরিহাসের সহিত বলা হইলেও, তাহার মধ্যে সত্য রহিয়াছে বোধ হইল। আমার জন্মের কয়েক মাস পূর্ব্বে পিতা আইন ব্যবসায় আরম্ভ করিয়াছিলেন। দিন দিন তাহার উন্নতি দেখা গেল। কিছুকাল মধ্যেই আমার পিতা কোন সুযোগে বার্ষিক দশ হাজার টাকা আয়ের একটা ছোট জমিদারী নীলামে ক্রয় করিলেন।

 শৈশব অবস্থায় আমার শরীর রুগ্ন ছিল। মা আমাকে লইয়া সর্ব্বদাই বিব্রত থাকিতেন। পিতামহ আমার স্বাস্থ্যের জন্য প্রচুর অর্থব্যয় করিয়াছিলেন। মৃত্যুশয্যায় তিনি নাকি আমার দিকে চাহিতে চাহিতে চক্ষু মুদিয়াছিলেন। আজ মনে হয়, সেই ঋষিতুল্য বৃদ্ধ বুঝি তাহার শেষ নিশ্বাস আমার প্রাণের মধ্যে রাখিয়া গিয়াছেন, তাই আমি মরিতে মরিতেও বার বার বাঁচিয়া উঠিতেছি।

 আমার যখন তিন বৎসর বয়স, তখন একবার কঠিন জ্বরে আক্রান্ত হইয়াছিলাম। কলিকাতার বড় বড় ডাক্তার কবিরাজ আমার জীবনের আশা ছাড়িয়া দিয়াছিলেন। আমার সমস্ত ইন্দ্রিয়শক্তি লুপ্ত হইয়াছিল। মহামহোপাধ্যায় স্বর্গীয় দ্বারকা নাথ সেন আমার চিকিৎসায় বিশেষ নৈপুণ্য দেখাইয়া ছিলেন।