পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাল্যে
১৯

 মা নিত্য শিবপূজা করিতেন। একদিন দুশ্চিন্তার উদ্বেগে নিতান্ত কাতর চিত্তে তিনি পূজার ঘরে অচেতন হইয়া পড়েন। জ্ঞান সঞ্চার হইলে মা বলিলেন, “খুকুমণি সেরে উঠ্‌বে, আর কোন ভয় নেই।” তিনি অন্তরে অন্তরে তাহার অভীষ্ট দেবের নিকট হইতে কোন আশ্বাস পাইয়াছিলেন কিনা কে জানে, তার পর হইতে বাস্তবিক আমার দেহ একপ্রকার ঔষধাদি ব্যতীতই নীরোগ হইতে লাগিল। চারি মাসের মধ্যে আমি সম্পূর্ণ সুস্থ হইলাম।

 একটা প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। মেঘমুক্ত চন্দ্রের মত আমার দেহকান্তি দিন দিন বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। আমার পরিপুষ্ট অবয়ব—উজ্জ্বল মুখ-শ্রী—দীর্ঘ নিবির কুন্তলশোভা―আনন্দোৎফুল্ল চলন ভঙ্গী দেখিয়া আত্মীয় স্বজন ও প্রতিবেশীগণ সকলেই আশ্চর্য্যান্বিত হইল। আমি পূর্ব্বে ধীর ও শান্তপ্রকৃতি ছিলাম; কিন্তু এই রোগ ভোগের পর আমি কিছু চঞ্চল স্বভাব হইয়া উঠিলাম। বিস্কুট লজেঞ্জুস কিনিবার জন্য মায়ের নিকট হইতে পয়সা লইয়া বড় রাস্তার উপরে মনোহারী দোকানে ছুটিয়া যাইতাম―ঘুড়ী ধরিবার জন্য আমাদের বাড়ীর প্রশস্ত ছাদে দৌড়াদৌড়ি করিতাম―অবশ্য পড়িয়া যাইবার আশঙ্কা ছিল না। ঝির সঙ্গে কখনও কখনও তাহাদের বাড়ীতে চলিয়া যাইতাম। চাকরেরা আমার দুষ্টামীতে অতিষ্ঠ হইয়া উঠিত। বাবার বৈঠকখানা ঘরে যাইয়া আমি গোলযোগ আরম্ভ করিতাম। বাড়ীতে আর ছোট ছেলে মেয়ে কেহই ছিল না। একমাত্র আমার চীৎকার ও হাস্য কলরবে এত বড় বাড়ীখানি সর্বদা মুখরিত থাকিত। বাবার নিকট আমার ছেলে বেলার এই সকল কথা শুনিয়া আমি সঙ্কুচিত হইতাম।