পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অগ্নি ক্রীড়া
১৩৫

নিমন্ত্রণ করে। কিন্তু মাহাত্মা গান্ধী সেই সমিতিতে যান নাই। তিনি বলেন “পতিতারা যদি একত্র মিলিত হইয়া সমিতি গঠন করে তবে দেশের চোর ডাকাতরাও সমিতি গঠন করিবে।” সেই দার্শনিক দেশকর্ম্মী মহাশয় মহাত্মাজীর তিরস্কার লাভ করিয়া এক্ষণে বরিশালের কর্ম্ম ক্ষেত্র হইতে নাকি চলিয়া গিয়াছেন।

 আমার জীবনেও এদিকে দুর্য্যোগ ঘনাইয়া আসিতেছিল। রাজনৈতিক আন্দোলনে বাহির হইয়া দেশকর্ম্মী যুবকদের মধ্যে বিচরণ করিবার সময় আমি আত্ম-সংযম করিতে পারি নাই। আমার কায়িক ও মানসিক অপরাধ হইয়াছে। যেখানে শিক্ষার অভাব— যেখানে শাসন নাই— যেখানে অহঙ্কারই প্রবল, সেখানে এরূপ ত হবেই। আমার সেই ব্যাঙ্কের কর্ম্মচারী— পাধ্যায় বাবুটী আমার বে-চাল লক্ষ্য করিয়াছেন— আমার আচরণ সন্দেহের চক্ষে দেখিয়াছেন।

 এদিকে তিনিও অপরাধী হইয়াছিলেন। আমি তাঁহাকে থিয়েটারে একটু বেশী যাওয়া-আসা করিতে দেখিলাম। একদিন থিয়েটারে গ্রীন্ রুম্ বা সাজ ঘরে কোন অভিনেত্রীর সহিত তাঁহার হাস্য পরিহাসের সময় আমার দৃষ্টি সেই দিকে পরিল। আমরা দু’জনেই থিয়েটার দেখিতে গিয়াছিলাম। আমাকে বক্সে রাখিয়া তিনি ছল করিয়া বাহিরে গিয়াছিলেন; গোপনে আমিও গিয়াছিলাম।

 আমাদের দুজনেরই হৃদয় বর্ষার বিদ্যুৎপূর্ণ দুইখানি মেঘের মত পরস্পর নিকটে আসিতেছিল। আশঙ্কা করিতেছিলাম, একদিন দিগ দিগন্ত কম্পিত করিয়া দারুণ বজ্রপাত হইবে।