পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/১৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৬
শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত

বেশ্যার দালালী করে তাহা জানিতাম। কোন কোন পতিতা নারীর নিকট আমি ভদ্রলোক দালাল রাখিবার পরামর্শ পাইয়াছিলাম, কিন্তু তখনও আমার বিবেক ও নীতিজ্ঞান একটু ছিল বলিয়া তাহা পারি নাই। আজ পাপ পথের শেষ সীমায় আসিয়া হৃদয়ের অবশিষ্ট সদ্ভাবটুকুকে পদদলিত করিতে আমি আর ইতস্ততঃ করিলাম না।

 আমার উকীল ও ব্যারিষ্টার দালাল দুইটা বেশ চতুর ও বুদ্ধিমান দালালী কার্য্যে তাহারা খুব পটু। দিনের পর দিন তাহাৱা আমার ঘরে বড় বড় লােক আনিতে লাগিল। কেহ, উচ্চশিক্ষিত জমিদার-পুত্র, কেহ রাজনীতিক নেতা, কেহ খ্যাতনামা চিকিৎসক, কেহ সমাজ সংস্কারক,—কেহ ধনী-ব্যবসায়ী। ইহাদের মধ্যে প্রৌঢ় ও বৃদ্ধের সংখ্যাই অধিক। বাংলাদেশের বাহিরের লোকও শাসিতে লাগল।

 চারি পাঁচ মাসের মধ্যে আমার হাতে কিছু টাকা জমল। আমার দালালরাও প্রচুর অর্থ পাইল। আমি আমার মনের দিকে চাহিয়া দেখিলাম, আমি কতক্ষুদ্র, কত হীন হইয়াছি, নিত্য মিথ্যাচার, প্রতিদিন প্রতারণা—কেবল অর্থগৃরতা— ইহার ফলে আমার হৃদয় যেন স্বাপদ সঙ্কুল অরণ্যের মত হইয়া উঠিল। দর্পণে মুখ দেখিয়া বুঝিলাম আমার সে লাবণ্য নাই—সে কান্তি নাই, নরকের ঘৃণিত ছবি যেন ফুটিয়া বাহির হইয়াছে।