পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৪
শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত

তখন টেবিল হারমোনিয়মের সম্মুখে গাইয়া বসিলাম। তাহার ঢাক্‌না খুলিয়া চাবি টিপিয়া গলা ছাড়িয়া গান ধরিলাম,―

আপনার মান রাখিতে জননী, আপনি কৃপাণ ধরগো,―
পরিহরি চারু কনক ভূষণ গৈরিক বসন পরগো
আমরা তোর কোটী কুসন্তান,
ভুলিয়া গিয়াছি আত্ম বলিদান,
করে মা পিশাচে তোর অপমান প্রতিকার তার করগো।

 গান শেষ হইলে বাবা আসিয়া বলিলেন “কিরে, খুকু―তোদের কি হচ্ছে?” নন্দ-দা মুহুর্ত্তের মধ্যে ছোরা দুখানি লইয়া আর এক দরজা দিয়া ছুটিয়া পলাইল। আজও আমার সে দিনের ঘটনা বেশ মনে আছে।

 সে দিন বাবা আমাকে এক স্বদেশী সভায় লইয়া গেলেন। এই গানটী আমি সভাস্থলে গাহিলাম। সকলে আমার খুব প্রশংসা করিল। ৺সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সেই সভার সভাপতি ছিলেন। আমি তখন বুঝিতে পারি নাই―উহাতেই আমার সর্ব্বনাশ হইতেছে। ঐ সভাতে বাবা এক বক্তৃতা দিলেন।

 তখন দামোদরের বন্যায় বর্দ্ধমান সহর ও তাহার নিকটবর্ত্তী বহুদূরব্যাপী স্থানসমূহের গৃহস্থগণ আশ্রয়হীন এবং দুর্দ্দশাগ্রস্থ হইয়াছিল। তাহাদের দুরবস্থা মোচনের জন্য সাহায্য ভাণ্ডার খোলা হয়। দেশের সহৃদয় জনসাধারণ তাহাতে অর্থদান করেন। অধিক পরিমাণে অর্থ সংগ্রহের জন্য কলিকাতার থিয়েটার সিনেমায় বেনিফিট্‌ নাইট অর্থাৎ সাহায্য রজনী ও অপর নানাবিধ আমোদ প্রমোদের ব্যবস্থাও হইয়াছিল।