পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কৈশোরে
৩৯

ভিতরের জীবন কাহিনীও তিনি আমাকে কিছু কিছু শুনাইলেন―যাহা মুকুলদারও অজ্ঞাত ছিল।

 দ্বিতীয়বার দারপরিগ্রহ করিবার দুই বৎসর পরে আমার পিতার একটী পুত্র সন্তান হয়। ইতিমধ্যে তিনি ওকালতী ব্যবসায় সম্পূর্ণরূণে পরিত্যাগ করিয়াছিলেন। এই বৈমাত্রেয় ভাইটীকে আমি অতিশয় স্নেহ করিতাম; কিন্তু তাহার জন্য পৃথক আয়া ও দাসী নিযুক্ত হওয়ায় আমি তাহাকে সর্ব্বদা কোলে নিতে পারিতাম না। সন্তান প্রসবের পর বিমাতার শরীর অসুস্থ হইয়া পড়িল। বাবা তাঁহাকে লইয়া বিব্রত হইলেন। বড় বড় ডাক্তার-কবিরাজ নিত্য আসিতে লাগিল। আট নয় মাস পরে বিমাতা একটু সুস্থ হইলেন বটে, কিন্তু শরীরের দুর্ব্বলতা দূর হইল না।

 আমার পিতার কোন কোন বন্ধু এবং আমার পিসিমা অনেকবার বাবার নিকট আমার বিবাহের কথা উত্থাপন করিয়াছিলেন, আমার কাণে তাহা আসিয়াছে। বাবা বলিলেন “এত অল্প বয়সে মেয়ের বিয়ে দিব না। ম্যাট্রিক্ পাশ করুক। তার পর দেখা যাবে।” পিসিমা ও পিতার বন্ধুগণ ইহার উত্তরে যাহা বলিয়াছিলেন, সে সমস্ত এখানে উল্লেখ নিষ্প্রয়োজন। আজকাল খবরের কাগজে এ বিষয়ে নানা বাদ প্রতিবাদ ও তর্কবিতর্ক আপনারা পাঠ করিয়া থাকেন।

 আমার যৌবনোদ্ভব হইয়াছিল। অভিভাবকের অসাবধানতায় ও অনুকূল পবনে যথাসময়ে আমার হৃদয়ের মধ্যে প্রবৃত্তির অনল জ্বলিয়া উঠিল―তাহা আমি বুঝিতে পারিয়াছিলাম। বিবাহের জন্য মনে মনে আমার আকাঙ্ক্ষাও হইত।