পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪
শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত

তোমায় পত্নীরূপে গ্রহণ করিয়াছিলাম―আবার ধর্ম্মের মুখ চেয়েই তোমায় পরিত্যাগ কর্‌ছি। অগ্নি পরীক্ষার পরও রামচন্দ্র কলঙ্কিত পত্নীকে নিয়ে গৃহধর্ম্ম পালন কর্‌তে পারেন নি। সীতার মত পত্নীকে বিসর্জ্জন কর্‌তে হয়েছিল। এখন বিদায়, আমার ভালবাসা তুমি চিরদিন পাবে―কিন্তু পত্নীরূপে নহে।”

 এই পত্রের উত্তর আমিই কমলাকে লিখিয়া দিয়াছিলাম। পত্রের উত্তর দিবার কমলার ইচ্ছা ছিল না। তার প্রাণে বড় আঘাত লাগিয়াছিল। বাহিরের আমোদ প্রমোদে সে তাহা ভুলিবার চেষ্টা করিত কিন্তু আমি তাহার হৃদয়ের অন্তস্থল পর্য্যন্ত দেখিতাম। আমার অনুরোধে ও উপদেশে কমলা শেষে এইরূপ লিখিল―“তুমি যাহা সিদ্ধান্ত করেছ, তাহা অটল থাকুক। তোমার পিতৃভক্তি যেন বিচলিত না হয়। তুমি ভারতের আদর্শ গৌরব দেখিয়ে যে দৃষ্টান্ত দিয়েছ, তাহার শেষ চিত্র তোমার চোখে পড়েনি। পরশুরামের প্রায়শ্চিত্ত―ভীষ্মের শরশয্যা রামচন্দ্রের বিলাপ তুমি ভুলে গিয়েছ। পিতৃভক্ত মাতৃঘাতী কুঠার হস্ত-মুক্ত করবার জন্য পরশুরামকে দীর্ঘকাল তীর্থ ভ্রমণ কর্‌তে হয়েছিল, পিতৃভক্তি তাকে রক্ষা কর্‌তে পারে নি। প্রেমে প্রত্যাখ্যাতা অম্বার তপস্যা ভীষ্মের ক্ষাত্রশক্তিকে নপুংসকের হস্তে পরাভুত করেছিল, পিতৃভক্তি তাহাকে রক্ষা করতে পারে নি। এ জগতে প্রত্যেক কর্ম্মের ফল পৃথক পৃথক ও স্বাধীন।”

 “একের দ্বারা অন্যের প্রতিরোধ হয় না। তোমায় উপদেশ দেওয়া আমার কর্ত্তব্য নহে। প্রগল্‌ভতা ক্ষমা করো। তুমি মহৎ―তাই আমায় পরিত্যাগ করেও চিরদিন