পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভুলভাঙ্গিল
৫৫

যদি ভাবিতাম যে আমি ত সংসারের কিছুই জানিনা—যদি পদে পদে ভয় হইত, তবে আমি কখনই এমনভাবে বাহির হইতাম না। কিন্তু একটা মিথ্যা গর্ব্ব আমাকে দুঃসাহসী ও দূরদৃষ্টিহীন করিয়া তুলিল। আজ মনে হয়, আমি যদি উপযুক্ত অভিভাবকের অধীন থাকিতাম, তবে আমার ভাল হইত। স্বাধীনতার মধ্যেও যে পরাধীনতার প্রয়োজন আছে, তাহা এখন বুঝিয়াছি।

 ভাবিয়াছিলাম, ঘরের বাহির হইলেই বুঝি সকল বাধা দূর হইয়া যাইবে— প্রবৃত্তির ভোগ একেবারে পূর্ণমাত্রায় চালাইতে পারিব। কিন্তু দিল্লীতে পেঁৗছিয়া দেখিলাম, ব্যাপার বড় গুরুতর। পুলিশের ভয়— আমাদিগকে লুকাইয়া থাকিতে হইবে। বিদেশে, লোকজন সমস্তই অচেনা। আমরা বাঙ্গালী, কোথায় যাই কোথায় থাকি, কি খাই। রমেশ-দা বাহিরে গেলে আমি একাকী কিরূপে ঘরে থাকিব! নানারকম সমস্যা—বহুপ্রকারের অসুবিধা। বাড়ীতে যে ইহা অপেক্ষা ছিল। ভাল সেখানেত আরও স্বাধীন ছিলাম—এমন কি রমেশ-দার সহিত গুপ্ত প্রণয়ের সুযোগও ছিল বেশী।

 অবশ্য টাকার জোরে সকল অসুবিধাই অতিক্রম করা যায়। কিন্তু রমেশদার কি এত টাকা আছে। আমি ত প্রায় এক বস্ত্রে বাহির হইয়া আসিয়াছি। রমেশ-দা আড়াই হাজার টাকা সঙ্গে আনিয়াছেন। বসিয়া বসিয়া খাইলে ইহাতে কতদিন চলিবে? পশ্চিম ভারতের যে কোন সহরেই থাকি, খুব উঁচু ষ্টাইলে ভাল হোটেলে থাকিতে হইবে। আমার কাপড় চোপড় ও কিছু গহনাপত্র চাই। একটা ছোকরা চাকরের দরকার। আমরা শাকভাত, ডালরুটি খাইয়া সন্ন্যাসীর মত গাছ তলায় থাকিতে নিশ্চয়ই আসি নাই।