পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮
শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত

খাওয়া-দাওয়া, চাল-চলন আমি অল্প সময়ের মধ্যেই শিখিয়া লইলাম। প্রথম প্রথম আমি এসব লইয়া অত্যন্ত বিব্রত হইয়া পড়িয়াছিলাম। রমেশ-দা আমাকে বলেন “হাঁরে মানু, তোরা বাংলা দেশের মেয়ে যদি পঞ্জাবে এসে মনে করিস্, ওরে বাবা— এ কোথায় এলাম——বোম্বাইয়ের লোক যদি বাংলায় যেয়ে খাওয়া দাওয়া চলাফেরা নিয়ে মুস্কিলে পরে, মাদ্রাজীরা যদি অযোধ্যাকে ভাবে বিদেশ, তবে বল্ দেখি সমগ্র ভারতে জাতীয়তা গড়ে উঠবে কি করে?”

 আমি বলিলাম, “ভারতবর্ষ এক বৃহৎ দেশ, এর মধ্যে ভাষার, ধর্ম্মের, সামাজিক রীতিনীতির এত বৈচিত্র, ও বৈষম্য যে এখানে একজাতি গড়ে উঠা অসম্ভব মনে হয়।” রমেশ-দা জোরের সহিত বলেন “এই অসম্ভবকেই সম্ভব করতে হবে।” রমেশদার এই একটা গুণ দেখিয়াছি, তিনি যেখানেই গিয়াছেন, তাহাকে নিতান্ত পরিচিত স্বদেশ বলিয়া মনে করিতেন— শুধু চিন্তায় নহে, কার্য্যেও।

 দিল্লী, লাহোর, শ্রীনগর, বোম্বাই এই সকল সহরে থাকিবার সময় ইতিহাস প্রসিদ্ধ ও তীর্থস্থান সমুহ দর্শন করিয়াছিলাম। ইহাতে আমার মানসিক বিকৃতি কিয়ৎ পরিমাণে দূর হইল। চঞ্চলতার পরিবর্ত্তে হৃয়য়ে শান্তভাব আসিল। বিমর্ষতার স্থলে আনন্দের ঔজ্জ্বল্য দেখা দিল; রমেশদা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলিলেন।

 শ্রীনগর হইতে বোম্বাই যাইবার পথে আমরা দ্বারকা ও রাজপুতনা হইয়া গিয়াছিলাম। পুষ্কর, ভরতপুর, জয়পুর, চিতোর প্রভৃতি স্থান দর্শন করিয়া আমার প্রাণে এক অপূর্ব্ব প্রশান্ত ভাবের