পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভুল ভাঙ্গিল
৫৯

উদয় হইল। আমি বাড়ীর কথা, বাবার কথা, সমস্ত ভুলিয়া গেলাম। একবার বাবার সঙ্গে এদিকে বেড়াইতে আসিতে চাহিয়াছিলাম। তিনি বিমাতার পক্ষপাতী হইয়া আমাকে লইয়া আসেন নাই। আজ রমেশদার অনুগ্রহে আমার সেই সাধ পূর্ণ হইল। আমি হাঁটিবার সময় রমেশদার হাত ধরিয়া চলিতাম— মোটরে চড়িয়া যাইবার সময় রমেশদার গলা জড়াইয়া বসিতাম। পশ্চিম ভারতের সেই উঁচু নীচু রাস্তায় মোটরে চলিবার সময় স্প্রিংএর মৃদু দোলায় নাচিয়া নাচিয়া আমাদের পরস্পর আনন্দিত বক্ষে কি পুলকের তরঙ্গ উঠিত! রমেশদার প্রতি শুধু প্রেমে নহে— কৃতজ্ঞতায়ও আমার হৃদয় ভরিয়া গেল।

 হলদিঘাট দেখাইয়া রমেশ-দা বলিলেন “এই আমাদের ভারতের খার্ম্মোপলি—যেখানে পনর হাজার রাজপুত দেশের জন্য প্রাণ দিয়াছিল। এ বীরত্ব গৌরব আজ আমরা ভুলে গেছি। রমেশদা একটী দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়। চুরুটের ধোঁয়া ছাড়িলেন। আমি ডি, এল, রায়ের রাণা-প্রতাপ নাটকের অভিনয় দেখিয়াছিলাম। আমি বলিলাম “এমন কঠোর ব্রত—এমন তীব্র বৈরাগ্য—স্বদেশের দাসত্ব মোচনের জন্য এমন অপূর্ব্ব স্বার্থত্যাগ আর কে করতে পারে? “এতবড় উচ্চ আদর্শ। দের কল্পনায়ও আসেনা।”

 পদ্মিনীর জহর-ব্রতের স্থান দেখিলাম। দর্শনার্থিরা সকলে প্রণাম করিতেছে। তাহাদের দেখাদেখি আমিও মাথা নোয়াইলাম, আমার বুক কাঁপিতেছিল। হাত দুখানি অবশ হইয়া আসিল, আমি পড়িয়া যাইতেছিলাম। পার্শ্বে দণ্ডায়মান রমেশদাকে ধরিয়া বলিলাম, “চল এখান থেকে যাই।”