পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দেহ বিক্রয়
৯৩

দুশ্চিন্তায় আমার মনে শান্তি নাই। জীবনে এই প্রথম আমি ব্যবসাদার খাটা বেশ্যার ঘরে প্রবেশ করি। আমার কেমন একটা অস্বস্তি বোধ হইতেছিল। নীচের তলায় এক কোণে ঘর—আলো বাতাস নাই। চারিদিকে একটা নূতন রকমের দুর্গন্ধ। কোথাও মাতালের বমি, কোথাও গান বাজ্না—কোথাও হৈ হৈ চীৎকার, কোথাও গালাগালি, ঝগড়া, এই সব দেখিয়া শুনিয়া আমার হৃদয় দমিয়া গেল; অথচ এখান হইতে পলাইয়া কোথায় যাইব তাহাও জানিনা।

 পরদিন সকালে খেঁদি বলিল, বেলিয়াঘাটায় তার এক মাসীর বাড়ী আছে, সে সেখানে যাইবে। আমরা আপত্তি করিলাম না। সে চলিয়া গেল। আমরা আরও তিন চারি দিন সেই বাড়ীতে রহিলাম। ইতিমধ্যে বাড়ীওয়ালী আমাকে ও কালীদাসীকে নানা প্রকারে বুঝাইয়া বেশ্যাবৃত্তি অবলম্বন করিতে মত লওয়াইল। সেই চতুরা নারীর সঙ্গে আমি তর্কে পারিলাম না। সে যে সকল যুক্তি দেখাইল তাহার সার মর্ম্ম এই—বেশ্যারা স্বাধীন; ভগবান তাহাদিগকে রূপ দিয়াছেন—পুরুষকে ভুলাইবার কৌশল দিয়াছেন কিসের জন্য?—তাহা দ্বারা জীবিকা উপার্জন করিতে। উকীল তাহার বুদ্ধি বিক্রয় করে—পণ্ডিত তাহার বিদ্যা বিক্রয় করে—এনন কি দীক্ষাগুরুও মন্ত্র বিক্রয় করেব; তবে রূপনতী কেন দেহ বিক্রয় করিবে না? বিপদ ভয় সকল ব্যবসায়েরই আছে। দেশের বড় বড় লোক সমস্ত বেশ্যাদের পায়ে বাঁধা। ধনী লোকদের টাকা বেশ্যাদের ঘরে উড়িয়া আসিয়া পরে। তাহাদের একটা কটাক্ষের মূল্য সহস্র টাকা।