নিরোধ করিবার জন্য একটা ঔষধ খাইয়াছিলাম— তারপর হইতে আমার নানা রোগ দেখা দিল। রাজবালাও সেই ঔষধ খাইয়াছিল, কিন্তু তার কোন অসুখ হইল না। আমি অতিশয় ক্ষীণ ও দুর্ব্বল হইয়া পড়িলাম। সমস্ত শরীরে বেদনা। হাত পায়ের তলায় বিশ্রী দাগ— মুখে গায়ে ফুস্কুরীর মত হইয়া যন্ত্রণাদায়ক ক্ষত উৎপন্ন হইল। রাণী-মাসী দেখিয়া বলিল, হাসপাতালে না গেলে আর রক্ষা নাই।
আমি জীবনের আশা পরিত্যাগ করিয়াছিলাম। বিছানায় পড়িয়া দিবারাত্রি অবিরত কাঁদিতাম। চক্ষের জলে বালিশ ভিজয়া যাইত। সেইবার রোগে ভুগিয়া বুঝিয়া ছিলাম, মরণে বোধ হয় সুখ আছে। আত্মীয় বন্ধু কেহ নাই। বাড়ীর অন্য স্ত্রীলোক সকলে নিজ নিজ কার্য্যে ব্যস্ত। সন্ধ্যার পর সকলকেই ব্যবসায়ের খাতিরে দরজায় দাঁড়াইতে হয়। তারপর সারা রাত্রি অনিদ্রায় মদ্যপানে অথবা নানা প্রকার উত্তেজনায় কাটাইয়া তাহারা বেলে ৮ টা ৯ টায় ঘুম হইতে উঠে। আমাকে কে দেখবে? চারিদিকে একটা বিভৎস ব্যপার আমার চক্ষে পড়িল। আমরা যেন শূকরীর দল— কাদায় গড়াগড়ি দিতেছি। বুঝিলাম এবার আমার মৃত্যু নিশ্চয়।
রাণী-মাসী ও রাজবালা দুজনে মিলিয়া আমাকে হাসপাতালে দিয়া আসিল। তিন মাস পরে সুস্থ হইয়া আমি বাড়ী ফিরিলাম। তখন আমার হাতে একটী পয়সাও নাই।