পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০২
শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত

 আমি বলিলাম, “রাণী-মাসী, আমার দেহকান্তি মলিন হয়েছে। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ক্ষীণ, বিশুষ্ক। মাথার চুলের আর সে পূর্ব্বের শোভা নাই। আমার দ্বারা এই পথে আর কি উপার্জ্জন হবে?” রাণী-মাসী আমাকে বুঝাইল; “পতিতার রূপই প্রধান সম্পত্তি নহে। লম্পটেরা রূপ দেখিয়া মোহিত হয় না। দেখবে অতি কুরূপা বেশ্যা, সুন্দরীদের অপেক্ষা অধিক অর্থ উপার্জ্জন কচ্ছে। এই জন্যে বলে যার সঙ্গে যার মজে মন। পুরুষগুলি যখন সন্ধ্যাবেলা বেশ্যা পল্লীতে ঘুরে বেড়ায় তখন কন্দর্পঠাকুর তাদের চোখে ধাঁধাঁ লাগিয়ে দেন।”

 রাণী-মাসী আমাকে কতকগুলি কৌশল শিখাইল। কাপড় পড়িবার ফাশান, দাঁড়াবার ভঙ্গী, কথা বলিবার কায়দা, চলিবার রীতি, এসব কিরূপ হইলে লোক আকৃষ্ট হয় সে তাহা দেখাইয়া দিল। মনে দারুণ দুঃখ ও অপ্রীতির কারণ থাকিলেও আগন্তুক পুরুষের সঙ্গে হাসিয়া কথা কহিতে হইবে। এমন ভালবাসা দেখাইবে— তাহা যে কপট, তাহা কেহ যেন ধরিতে না পারে। প্রণয়ী মদ্যপানাসক্ত হইলে তাহার মন রক্ষার জন্য কিরূপে মদের গ্লাস ঠোঁটের কাছে ধরিয়া ম্যপানের ভাণ করিতে হয় তাহা দেখিয়া লইলাম। লম্পটদের মধ্যে যে ব্যক্তি যে প্রকারের আমোদ চায় তাহাকে তাহাই দিতে হয়। এই প্রকার প্রতারণা শিক্ষা করিতে করিতে আমার বোধ হইল, যেন আমার হৃদয়ের মধ্যে একটী নূতন মানদাম সৃষ্টি হইতেছে।

 আমি ভাল গাহিতে পারিতাম। গলার স্বরও আমার বেশ সুমিষ্ট ছিল, একথা পূর্ব্বে বলিয়াছি। এ বিদ্যাটী পতিতার জীবনে