পাতা:শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত - মানদা দেবী.pdf/৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৬
শিক্ষিতা পতিতার আত্মচরিত

রহিয়াছে। বিছানার জন্য গদী তৈয়ার হইয়াছে। তাহার গায়ে কিছু নূতন গহনাও দেখিলাম। রাণী-মাসীর টাকা সে পরিশোধ করিয়াছে; তাহার নিজের হাতে কিছু নগদ টাকাও জমিয়াছে। খোলার ঘরে থাকিয়া বেশ্যাদের এত অর্থ উপার্জ্জন হয়, আমার পূর্ব্বে ধারণা ছিলনা। আমি ইহার কারণ জিজ্ঞাসা করিলে রাজবালা কহিল “নানাপ্রকার লোক বেশ্যালয়ে আসে। যাহারা ধনী জমিদারের ছেলে, তাহারা বন্ধুবান্ধব লইয়া প্রকাশ্যে বেশ্যাদের নিকটে যায়। লোক-লজ্জা, ভয় ইহাদের নাই। ইহারা মদ্যপান, গান-বাজনা প্রভৃতি আমোদ প্রমোদে লিপ্ত হয়। ছোটখাট খোলার ঘরে ইহাদের পদার্পণ হয়না। রামবাগান, সোনাগাছিই তাহাদের প্রধান তীর্থক্ষেত্র। আর একদল লম্পট আছে, যাহারা সমাজের নিন্দার ভয় করে— যাহারা উচ্চপদস্থ ব্যক্তি বলিয়া সম্মানিত, তাহারা একাকী গোপনে বেশ্যাগৃহে আসে। কেবলমাত্র প্রবৃত্তির তাড়নাই ইহাদের আসিবার কারণ। গান বাজনা, বা অপর কোন আমোদ প্রমোদ ইহারা চাহেনা। লুকাইয়া লুকাইয়া ইহারা আসিয়া চলিয়া যায়— এদিকে লোক সমাজেও নিজেদের মান মর্যাদা ও সুনাম রক্ষা করে। কবি, সাহিত্যক, সমাজ সংস্কারক, নামজাদা উকিল— স্কুলের মাষ্টার, কলেজের প্রফেসার,— রাজনীতিক নেতা, উপনেতা, গবর্ণমেণ্ট আফিসের বড় কর্ম্মচারা, ব্রাহ্ম, মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত, বিঘাভূষণ, তর্কবাগীশ প্রভৃতি উপাধিধারী অধ্যাপক, পুরোহিত, মোহান্ত, গুরুগিরি ব্যবসায়ী এই সকল লোক এই শ্রেণীর। আমার ঘরে একজন হাইকোর্টের বিখ্যাত উকীল আসেন। তিনি অতি উচ্চবংশীয় ভদ্র সন্তান।