পাতা:শিখ-ইতিহাস.djvu/১৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

-শিখদিগের স্বাধীন রাজ্য Ꮌ Ꮈ☾ সমাজের অন্তর্গত বলিয়া, এই সম্প্রদায়ের শিখগণ স্পৰ্দ্ধা করিত। ধর্মের জন্য গুরু সকলকে ধন-মান, ঐশ্বৰ্য-সম্পদ, এমন কি, প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিতে অল্পমতি করিয়াছেন ;-ঘর -বাড়ী—সংসার-বন্ধন পরিত্যাগ করিয়া যুদ্ধ-বৃত্তি গ্রহণ করিতে আদেশ দিয়াছেন। গুরু গোবিন্দ এবং তাহার পূর্ববর্তিগণ সকলেই একবাক্যে হিন্দুদিগের আসার সন্ন্যাস-ধর্মের নিন্দা করিয়াছেন। এইরূপে অসার ও অনুপযোগী সর্ববিধ উপকরণ পরিত্যক্ত হওয়ায়, ধর্মোন্মত্ত শিখদিগের মনে এক ভয়াবহ আবর্তন উপস্থিত হইয়াছিল ;–তাহাদের মানসিক গতি অস্বাভাবিক কার্য সাধনে ভয়াবহ ঘূতি ধারণ করিয়াছিল। সংসার পরিত্যাগ করিয়া সন্ন্যাস ধর্ম আচরণের সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধবিদ্যা শিক্ষার উৎকট অভিলাষ হওয়ায়, দুইটি বিরুদ্ধ -ধর্মাক্রান্ত অনুষ্ঠানের সংঘর্ষে “আকালিগণ’ একটি স্বতন্ত্র সম্প্রদায়ে পরিণত হইয়াছিল। ধর্মভীরু বিনয়ী ব্যক্তিগণ ধর্মমন্দিরের অতি হেয় কার্ষ আগ্রহ ও অধ্যবসায় সহকার সম্পন্ন করিত। কিন্তু অপরাপর ব্যক্তিগণ সময় সময় দুর্দমনীয় ধমেণত্মত্ততা-বশে অস্ত্র-শস্ত্রে স্থসজ্জিত হইয়া অমৃতসরের প্রহরী নিযুক্ত হইত। কখনও বা কুসংস্কারবশে উত্তেজিত হইয়া যথেচ্ছা গমন করিত, এবং সময় সময় উত্তেজনা-বশে একাকী ভ্রমণ করিয়া তরবারি সাহায্যে জীবিকা অর্জন করিত ৭৫ তাহারা সময় সময় পরিদর্শক এবং বিচারকের ক্ষমতা কিয়ৎপরিমাণে গ্রহণ করিত । তাহীদের কোন অধিনায়ক বিশ্বাসঘাতকতা অপরাধে খালসার নিকট অভিযুক্ত হয় নাই। তাহাদের নামে সকলেরই মনে ভয়ের ৪৫। ম্যালকমের সার সংগ্রহ দ্রষ্টব্য। ( Malcolm, 'Sketch', p. 116) গুরুগোৰিন এই ‘আকালি" সম্পদায়ের প্রতিষ্ঠা করেন, - ম্যালকমও সেই মত সমর্থন করিয়াছেন। তদ্বিষয়ে গুরুগোবিন্দের কোন লিখিত বিবরণ পাওয়া যায় না। একমাত্র ধর্মানুরাগীদিগকেই গোবিন্দ শিখ-সম্প্রদায়ের অন্তভুক্ত করিবার সকল্প করিয়াছিলেন কি না, সে বিষয় তাহাতে হয়ত জানা যাইত। সুতরাং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎপত্তি ও গঠন সম্বন্ধে মূলগ্রন্থে যে বিবরণ প্রদত্ত হইয়াছে, তাহাই প্রকৃত । শিখদিগের ধর্ম প্রবৃত্তি এত প্রবল ছিল যে, প্রত্যেক শিপ কোন না কোন কার্যে নিযুক্ত থাকিত, অথবা কোন ব্যবসায় বাণিজ্য করিত। যে ব্যক্তি সংসার-বিরাগী এবং স্বভাবতঃ যুদ্ধ-প্রিয় নহে, সাধারণতন্ত্রের মঙ্গল সাধনার্থ তাহাকেও কোন না কোন কার্যে নিযুক্ত থাকিতে হইত। এক সময় গ্রন্থকার দেখিয়াছিলেন,—একজন "আকালি শতদ্রুর সমতল ভূমি হইতে ক্ষুদ্র কীরিতপুর সহর পর্যস্ত বিস্তৃত ঢালু অত্যুচ্চ পর্বতকন্দরের মধ্য দিয়া রাস্ত নিৰ্মাণ করিতেছে। সেই ব্যক্তি সর্বপ্রকার সংসার বন্ধণ পরিত্যাগ করিয়াছিল। সকলেই তাহাকে বিশেষ প্রশংসা করিত। কোন নির্দিষ্ট স্বানে এই ব্যক্তির জগু সৰ্বসাধারণে খাদ্য ও বস্ত্র সংগ্ৰহ করিয়া রাখিত । তাহার এই অধ্যবসায়শীলতা ও একাগ্রতায় একজন মেষপালক হিন্দু বালকের মনে এক অভিনব প্রভাব বিস্তৃত হইয়াছিল। সেই হিন্দু বালক আকালিদিগের স্তায় পোষাক-পরিচ্ছদ ব্যবহার করিত। ধর্মনিষ্ঠ ব্যক্তিগণ সর্বদাই যেমন ঈশ্বরকে ভয় করিয়া থাকেন, সেই বালকও তক্রপ ভীতি সহকারে ধর্মালাপ কল্পিত ।