পাতা:শিখ-ইতিহাস.djvu/২৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রণজিৎ সিংহের মৃত্যু २ १> সেই সময় সৈয়দ দিল্লীতে গমন করেন ; আবদুল আজিজ নামক একজন তত্ৰত্য ধর্মপ্রচারক তখন ব্যক্ত করিলেন যে, তিনি অর্মমেদের সত্য-ধর্ম-নিষ্ঠায় বহুল পরিমাণে শিক্ষা প্রাপ্ত হইয়াছেন ; তৎকালপ্রচলিত ধর্মোপাসনার সর্ববিধ কু-প্রথাসমূহ আমেদ নিন্দনীয় ও দণ্ডাহঁ বলিয়া নির্দেশ করিলেন। তিনি প্রাচীন ধর্ম প্রচারকগণের ধর্ম-ব্যাখ্যার উল্লেখ করিলেন না ; একমাত্র কোরাণের উপদেশ সমূহ মনোযোগপূর্বক আলোচনা করিতে, তিনি সকলকে উপদেশ দিতে লাগিলেন। র্তাহার যশোরশ্মি চতুর্দিকে বিস্তৃত হইল, ইসমাইল এবং আবদুল হাই নামক শিক্ষিত অথচ স্বতন্ত্র মতাবলম্বী দুই জন মৌলবী সৈয়দের শিষ্য ও অনুগত আজ্ঞাবাহীরূপে তাহার অনুরক্ত হইলেন।15 সৈয়দ প্রচার করিলেন,—সকল কার্যের প্রারম্ভে তীর্থ-যাত্রা বিশেষ মঙ্গলসূচক । ১৮২২ খ্ৰীষ্টাব্দে প্রৰাস-. ১৪ । মৌলবী ইসমাইল সৈয়দ আমেদের সম্বন্ধে একখানি পুস্তক উদু ভাষায় (উত্তর ভারতে প্রচলিত ভাষায় ) প্রণয়ন করেন। এই গ্রন্থ সদুপদেশপূর্ণ এবং তাহার মত-সমর্থনক্ষম। এই গ্রন্থের নাম,–টাকভিয়া-উল-ইমান' বা ধর্মের ভিত্তি ; এই গ্রন্থ কলিকাতায় মুদ্রিত হয়। গ্রন্থখানি দুই ভাগে বিভক্ত। তন্মধ্যে প্রথম খণ্ডই ইসমাইলের লিখিত বলিয়া বুঝিতে পারা যায় ; দ্বিতীয় খণ্ড কতকাংশে নিকৃষ্ট। এই হেতু মনে হয় ইহ। অপর কোন ব্যক্তির লেখনীপ্রস্থত। স্বচনায় ( মুখবন্ধে ) গ্রন্থকার এই বলিয়া প্রার্থনা করিয়াছেন,—“যে একমাত্র জ্ঞানী এবং ৰিম্বান ব্যক্তি, ঈশ্বর-বাক্য হৃদয়ঙ্গম করিতে সক্ষম " ঈশ্বর স্বয়ং বলিয়াছেন, ঈশ্বরের উপদেশ-প্রচার-ব্যপদেশে অসভ্য ও অজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের মধ্য হইতেই একজন প্রচারক নির্দিষ্ট হইয়া থাকে। তিনি–জগদীশ্বর— — স্বয়ং ইচ্ছা করিয়াই বাধ্যতার পথ এত সুগম করিয়া রাখিয়াছেন। প্রধানতঃ, দুইটি বস্তু সর্বাগ্রে প্রয়োজনীয় । প্রথম, একেশ্বরবাদিত্বে বিশ্বাস স্থাপন ; এক ঈশ্বর ব্যতীত অস্ত কাহারও প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করা, দ্বিতীয়, প্রচারকের সম্বন্ধে জ্ঞানলাভ ও তৎপ্রতি বিশ্বাস স্থাপন : ইহাই ঈশ্বরাদিষ্ট নিয়মের বাধ্যতা বা বশবর্তিত। অনেকে মনে করেন, যোগি-পুরুষদিগের বাক্যই তাহাঁদের পরিচালক । কিন্তু একমাত্র ঈশ্বর-বাক্যই পালন করিতে হইবে ; কিন্তু শিক্ষালাভের জন্ত ধাৰ্মিক ব্যক্তিগণের উপদেশ পাঠ করিতে হইবে ; কেননা সেগুলি ধৰ্মপুস্তকের সহিত একমতাবলম্বী।" এই গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে একেশ্বরবাদিত্বের বিষয়ই উল্লিখিত আছে। এই অধ্যায়ে যোগী, দেবদূs প্রভূতির নিকট প্রার্থনা অধৰ্মমূলক বলিয়া বর্জিত হইয়াছে ; এইরূপ উপাসনার যে সকল কারণ নির্দিষ্ট হইয়াছে, তাহা অমূলক ; তাহাতে ঈশ্বর-বাক্যের প্রতি সম্পূর্ণ অবমাননা প্রদর্শিত হয় ;–এই অংশে তিনি এবশ্বকার বর্ণনা করিয়াছেন। প্রাচীন পৌত্তলিকগণ বলিয়াছেন যে, তাহারা ‘কেবলমাত্র শক্তি এবং ক্ষুদ্র দেবতার পূজা করিয়া থাকেন : র্তাহারা উপাস্ত বস্তুসমূহকে ‘সর্বশক্তিমানের সমপদবাচ্য বলিয়া স্বীকার করেন না ; কিন্তু জগদীশ্বর স্বয়ং এই অধাৰ্মিকদিগের বাক্যের উত্তর প্রদান করিয়াছেন ; —তাহাদের অধৰ্মাচরণের শাস্তি বিধান করিয়া দেন। সেইরূপ মৃত সন্ন্যাসী অথবা মঠবাসীকে ঈশ্বরবোৰে তৎপ্রতি সন্মান প্রদর্শন করায়, খৃষ্টানগণ তিরস্কৃত হইয়াছিলেন। ঈশ্বর অদ্বিতীয় ; তাহার আর কোন সহচর নাই ; একমাত্র তাঁহারই নিকট ধুল্যবলুষ্ঠিত হইয়া অভিবাদন করা ও ভক্তি প্রদর্শন কর্তব্য ; আর কেহই সেরাপ ভক্তির পাত্র নহে।" . গ্রন্থকার এইভাবে অনেক বিষয় বর্ণনা করিয়াছেন। কিন্তু পরিশেষে তিনি সন্দেহে নিপতিত হইয়াছেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ,-মহম্মদ বলেন, ঈশ্বর অদ্বিতীয় ; পিতা-মাতার নিকট হইতেই মানুষ জানিতে পারে যে, সে জন্মগ্রহণ করিয়াছে ; মানুষ তাহার মাতাকে বিশ্বাস করে ; তথাপি দেবদূতের বা ঈশ্বর-প্রেরিত ব্যক্তির প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করিতে পারে না। অন্তপক্ষে একজন পাপী ব্যক্তিরও যদি ধৰ্মজ্ঞান থাকে, তথাপি সে একজন ধর্মপ্রাণ পৌত্তলিক অপেক্ষ শ্রেষ্ঠপদৰাচা । 38