পাতা:শিখ-ইতিহাস.djvu/৪৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ubb" শিখ-ইতিহাস উলমূলুকের নিকট হইতে পঞ্জাব-কেশরী মহারাজ রণজিৎ সিংহ অশেষ আয়াসে যে মহামণি অধিকার করিয়া লইয়া ছিলেন, এই সন্ধি-সর্তে পুরাণপ্ৰসিদ্ধ সেই অমূল্য মণি সাগর পারে বৃটিশ দ্বীপে চলিয়া গেল। তৃতীয় সর্তে,—মহারাজ দলীপ সিংহ পঞ্জাব হইতে নির্বাসিত হইলেন ; গবর্ণর-জেনারেল লর্ড ডালহাউসির অভিপ্রায়-মত যে-কোন স্থানে তাহাকে অবস্থান করিতে হইবে, স্থির হইল। সম্মানের মধ্যে র্তাহার চূড়ান্ত হইল,—তিনি ভূয়া ‘মহারাজা বাহাদুর উপাধি উপভোগ করিতে পারিবেন ; আর তাহার প্রয়োজন-মত বৎসরে চারি লক্ষ হইতে পাঁচ লক্ষ পর্যন্ত টাকা তিনি পেন্সন বা বৃত্তি প্রাপ্ত হইবেন । আর যে সর্ত, সে সকলের উল্লেখ করা নিম্প্রয়োজন । ফলতঃ, এই সন্ধি-সর্তে শিখের পঞ্জাব, ইংরেজের পঞ্জাব বলিয়া গণ্য হইল । ১৮৪১ খৃষ্টাব্দের ২৯শে মার্চ, গবর্ণর জেনারেল লর্ড ডালহাউসীর স্বাক্ষরিত এক ঘোষণাপত্র প্রচারিত হইল । গবর্ণর-জেনারেল ঘোষণা-প্রচার করিলেন,-“আজি হইতে পঞ্জাব-রাজ্যের অবসান, আজি হইতে মহারাজ দলীপ সিংহের সমস্ত রাজ্য বৃটিশসাম্রাজ্যের অন্তভূক্ত।” স্থূলতঃ কারণ দেখান হইল,—‘শিখগণ বড়ই দুৰ্দ্ধৰ্ষ জাতি ; তাহার কাহারও বগুতা স্বীকার করিতে চাহে না ; সময় সময় লাহোর গবর্ণমেণ্টের বিরুদ্ধেও তাহারা অস্ত্ৰধারণ করিতে কুষ্ঠিত নহে। শিখদিগকে স্বশৃঙ্খলায় পরিপালন করা বড়ই দুরূহ ব্যাপার ; উচ্ছৃঙ্খলায়, আত্মকলহে শিখজাতির অবসান অবশুম্ভাবী। লাহোর গবর্ণমেণ্ট এখন আর তাহাদিগকে দমন করিতে পারিতেছেন না ; এদিকে শিখজাতিকে দমন রাখিতে না পারিলে,—তাহাদিগকে স্বগৃঙ্খলায় পরিচালিত করিতে না পারিলে, বৃটিশ-গবর্ণমেণ্টেরও প্রতিপদেই বিপত্তির সম্ভবনা। ইংরেজের আত্মরক্ষার জন্য এবং শিখদিগের পরিত্রাণ-হেতু, ইংরেজগণ শুভ অনুষ্ঠানে প্রবৃত্ত। বহুদিন হইতে ইংরেজগণ শিখদিগের শুভাকাঙ্ক্ষা করিয়া আসিতেছেন। মহারাজ রণজিৎ সিংহ, ইংরেজের পরম মিত্র ছিলেন ; তাহার বড় সাধের শিখজাতি নিন্মুল না হয়, এই জন্যই র্তাহাদের প্রতি এই করুণার শাস্তি-বারি বধিত হইল।” ফলতঃ, শিখ-জাতির প্রতি দয়া-পরবশ হইয়াই বৃটিশ গবর্ণমেণ্ট পঞ্জাব অধিকার করিয়া লইলেন ;–গবর্ণর জেনারেলের ঘোষণাপত্রে প্রকারাস্তরে এই কথাই ব্যক্ত হইল । - এইরূপে পঞ্জাব বৃটিশ-রাজ্যের অন্তভূক্ত হইলে, পঞ্জাবের আরও নানা পরিবর্তন সাধিত হইল ; কমিশনার এবং ডেপুটি কমিশনারগণের অধীনে পঞ্জাবের শাসনকার্য নির্বাহিত হইতে লাগিল । ইংরেজগণ বাছিয়া বাছিয়া শিখ সৈন্যগণকে আপনাদের সুন্যদলে ভুক্ত করিয়া লইলেন। দেশের সমস্ত লোকের অস্ত্র-শস্ত্র কড়িয়া লওয়া হইল। যাহারা ইংরেজের একান্ত বিশ্বাসভাজন হইল, তাহারাই সৈন্যদলে চাকরী পাইল ; অবশিষ্ট শিখগণ কৃষিকার্যে জীবিকা-নির্বাহ করিতে বাধ্য হইল। ইংরেজের প্রতাপে পঞ্জাবে যেন দারুণ বিভীষিকা রাজত্ব বিস্তার করিল। অধিক বলিব কি, সেই বিভীষিকার ফলে, পরবর্তীকালে সিপাহী-বিদ্রোহের সময়, পঞ্জাব আদৌ মস্তক উত্তোলন করিতে পারে নাই –পঞ্জাবের দুৰ্দ্ধৰ্ষ শিখগণ, তখন শাস্তিপ্রিয় জাতি বলিয়া পরিচিত হইয়াছিল।