পাতা:শিখ-ইতিহাস.djvu/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিখ-ইতিহাসন প্রসঙ্গে শিখ হলেন তারা, যারা গুরু নানকের ( ১৪৬৯-১৫৩৮ ) শিষ্য । লাহোরের ৫৬ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে তালওয়ান্দি গ্রামে গুরু নানকের জন্ম। এখন এই গ্রাম নানকানা নামে পরিচিত। বিদ্যালয়-শিক্ষার প্রতি বিরাগসম্পন্ন নানক ছোট থেকেই নির্জনতা ও সাধুসঙ্গ প্রার্থনা করতেন। মাত্র ৯ বছর বয়সেই তিনি উপবীত গ্রহণে অসম্মতি জানান। ফাসাঁদক্ষ গুরু নানক কিছুকাল গুদামরক্ষকের কাজে নিযুক্ত থেকে বনবাসী হন এবং তীর্থভ্রমণে নানা দেশ ভ্রমণ করেন। ভ্রমণাস্তে তিনি কর্তারপুরে এসে বসবাস করেন এবং ধর্মপ্রচার ও দীক্ষাদানে ব্যাপৃত হন। এখানেই তার মৃত্যু ঘটে। শিষ্য অঙ্গদকে পরবর্তী গুরু হিসাবে মনোনীত করে যান। গুরু নানকের ধর্মের প্রধান শিক্ষা ছিল ঈশ্বর এক, গুরু নির্ভরতা এবং নাম জপ । ঈশ্বর সত্য, স্রষ্টা, নিভাক, শত্রুহীন, অমর, স্বপ্রকাশ, মহান ও দাতা । শিষ্যগণকে নিরস্তর তার নাম জপ করার আদেশ দিয়ে যান । গুরু হল সমুদ্র বিশেষ এবং গুরুর শিষ্য শিখগণ হলেন নদী—উভয়ের মিলনেই মহত্বলাভ ঘটতে পারে । নামজপ শিখকে অক্ষয় স্বৰ্গবাসের অধিকারী করে। মুর্তি-পূজার প্রশ্ৰয় না দিলেও তিনি স্বর্গনরক, পাপ-পূণ্য ও কর্মফলে বিশ্বাসী ছিলেন। যে কোনো ধর্মের আচারপ্রিয়তা র্তার কাছে নিন্দনীয় ছিল। হিন্দু মুসলমানের ধর্মগত ও সামাজিক মিলনপ্রয়াসী নানকের শিষ্যরা এসেছিলেন উভয় সম্প্রদায় থেকেই । বস্তুতপক্ষে নানকের মৃত্যুর ( ১৫৩৮ ) পর থেকেই শিখ-সম্প্রদায়ের প্রধান ব্যক্তিই গুরু" নামে অভিহিত হতে থাকেন । অঙ্গদ ( ১৫৩৮-৫২ ), অমরদাস ( ১৫৫২-৭৪), রামদাস ( ১৫৭৪-৮১ ), অজ’ন ( ১৫৮১-১৬০৬ ), হরগোবিন্দ ( ১৬০৬-৪৫ ), হর রাই ( ১৬৪৬-৬১ ), হর কিষাণ ( ১৬৬১-৮৪ ) এবং গুরু গোবিন্দ সিংহ ( ১৬৭৫-১৭০৮ ) ক্রমে যে গুরু পরম্পরা তা শিখ সম্প্রদায়কে একটি বিশিষ্ট জাতিতে সংগঠিত করে। বস্তুতপক্ষে সস্তগুরু রামদাসকে ( ৪র্থ গুরু ) সম্রাট আকবর পর্যন্ত শ্রদ্ধা করতেন এবং তার প্রদত্ত জমিতেই পরবর্তীকালে বিখ্যাত অমৃতসর মন্দির গড়ে ওঠে। গুরু অঙ্গদ গুরুমুখী ভাষা ও লিপিকে ধথোচিত গুরুত্ব দেওয়ার পর নানকের স্মৃতিকথা সংকলনে উদ্যোগী হন । এ বিষয়ে নানকসঙ্গী বালা র্তাকে যথাযথ সহায়তা করেন । পঞ্জাবী ভাষায় প্রথম গদ্যকীতি হল গুরু অঙ্গদ-কৃত এই স্মৃতি-সংকলন । বিনামূল্যে আহার সরবরাহের জন্য লঙ্গরখানার প্রতিষ্ঠ গুরু অঙ্গদের তৃতীয় উল্লেখযোগ্য কীর্তি কারণ শিখদের মধ্যে ঐক্যস্থাপনে এই উদ্যোগ সর্বাংশে উপযোগী হয়েছিল। শিখেরা এখন জানলেন যে একটা সাধারণ উদ্দেশু দান করা মহৎ কর্তব্যবিশেষ । এটাই সত্য ধর্মাচরণ তাও জানলেন। ফলে শিখ সম্প্রদায় প্রথম স্বগঠিত হবার সুযোগ পেল।