পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/১০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০০
শি বা জী

ক্ষতি হইয়াছিল তাহার বহুগুণ অধিক ধন দান করিলেন।

 ক্রমে ভীমা নদী পার হইয়া, আগ্রা হইতে রওনা হইবার পূর্ণ তিনমাস পরে, নিজ রাজধানী রাজগড়ে পৌঁছিলেন (২০এ নবেম্বর)। দুর্গের দ্বারে গিয়া জীজা বাঈকে সংবাদ পাঠাইলেন যে, উত্তর দেশ হইতে একদল বৈরাগী আসিয়াছে—তাহারা সাক্ষাৎ করিতে চায়। জীজা বাঈ অনুমতি দিলেন। অগ্রগামী মোহন্ত (অর্থাৎ নিরাজী) হাত তুলিয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন, কিন্তু পশ্চাতের চেলা বৈরাগীটি জীজা বাঈ-এর পায়ের উপর মাথা রাখিল। তিনি আশ্চর্য্য হইলেন, সন্ন্যাসী কেন তাঁহাকে প্রণাম করে? তখন ছদ্মবেশী শিবাজী টুপি খুলিয়া নিজ মাথা মাতার কোলে রাখিলেন, এতদিনের হারাধনকে মাতা চিনিতে পারিলেন! অমনি চারিদিকে আনন্দের রোল উঠিল, বাজনা বাজিতে লাগিল, দুর্গ হইতে তোপধ্বনি হইল। মহা হর্ষে সমগ্র মহারাষ্ট্র জানিল—দেশের রাজা নিরাপদে দেশে ফিরিয়াছেন।

 শিবাজী দেশে ফিরিলেন, কিন্তু সঙ্গে পুত্রটি নাই। তিনি রটাইয়া দিলেন যে, পথে শম্ভুজীর মৃত্যু হইয়াছে। এইরূপে দাক্ষিণাত্যের পথের যত মুঘল-প্রহরীদের মন নিশ্চিন্ত হইলে, তিনি গোপনে মথুরার সেই তিন ব্রাহ্মণকে পত্র লিখিলেন। তাহারা পরিবারবর্গ লইয়া শম্ভুজীকে ব্রাহ্মণের বেশ পরাইয়া, কুটুম্ব বলিয়া পরিচয় দিয়া, মহারাষ্ট্রে আসিয়া উপস্থিত হইল। পথে এক মুঘল-কর্ম্মচারী তাহাদের গেরেফ্‌তার করে, কিন্তু রাহ্মণগণ তাহার সন্দেহ-ভঞ্জনার্থ শম্ভুজীর সহিত এক পংক্তিতে বসিয়া ভোজন করিল,—যেন শম্ভুজী শূদ্র নহেন, তাহাদের স্বশ্রেণীর ব্রাহ্মণ। কৃষ্ণাজী কাশীজী ও বিশাজী—এই তিন ভাইকে শিবাজী “বিশ্বাস রাও” উপাধি, এক লক্ষ মোহর এবং বার্ষিক পঞ্চাশ হাজার টাকার জাগীর পুরস্কার দিলেন।