পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/১০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিবাজী ও আওরংজীবের সাক্ষাৎ
১০১

 শিবাজীর পলায়নে আওরংজীবের মনে আমরণ আপশোষ হইয়াছিল। তিনি ৯১ বৎসর বয়সে মৃত্যুর সময় নিজ উইলে লিখিয়াছিলেন, “শাসনের প্রধান স্তম্ভ রাজ্যে যাহা ঘটে তাহার খবর রাখা; এক মুহূর্ত্তের অবহেলা দীর্ঘকাল লজ্জার কারণ হয়। এই দেখ,হতভাগা শিবাজী আমার কর্ম্মচারীদের অসাবধানতায় পলাইয়া গেল, আর তাহার জন্য আমাকে জীবনের শেষদিন পর্য্যন্ত এই-সব কষ্টকর যুদ্ধে লাগিয়া থাকিতে হইল।”

শিবাজী সম্বন্ধে আওরংজীব এবং জয়সিংহের মনের অভিপ্রায় কি?

 জয়সিংহের পত্রাবলী হইতে শিবাজীর বন্দী-দশায় মুঘল-রাজনীতির হেরফের অতি স্পষ্ট বুঝা যায়। বাদশাহর প্রথমে অভিপ্রায় ছিল, প্রথম দিন দর্শনের পর শিবাজীকে একটি হাতী, খেলাৎ এবং কিছু মণিমুক্তা উপহার দিবেন। কিন্তু দরবারে শিবাজীর অসভ্য ব্যবহারে চটিয়া গিয়া তিনি এই দান স্থগিত রাখিলেন। এদিকে শিবাজী বাসায় ফিরিয়া বলিয়া বেড়াইতে লাগিলেন যে, মুঘল-রাজসরকার তাঁহার সম্বন্ধে নিজ প্রতিজ্ঞা রক্ষা করেন নাই। তখন আওরংজীব জয়সিংহকে জিজ্ঞাসা করিয়া পাঠাইলেন, তিনি বাদশাহর পক্ষ হইতে শিবাজীকে কি কি প্রতিজ্ঞা করিয়াছিলেন। উত্তরে জয়সিংহ পুরন্দর-সন্ধির শর্ত্তগুলি লিখিয়া পাঠাইলেন এবং জানাইলেন যে, শিবাজীকে ইহার অতিরিক্ত কোন কথা দেওয়া হয় নাই।

 এদিকে আগ্রায় যখন শিবাজী কঠোরভাবে নজরবন্দী হইলেন, জয়সিংহ তখন মহাসঙ্কটে পড়িলেন। একদিকে দাক্ষিণাত্যের আশু বিপদ লাঘব করিবার জন্য শিবাজীকে উত্তর-ভারতে সরাইয়া দিয়াছেন; অপরদিকে তিনি ধর্ম্ম-শপথ করিয়াছেন যে, আগ্রায় গেলে শিবাজীর কোন অনিষ্ট বা স্বাধীনতা-লোপ হইবে না। তিনি আওরংজীবের প্রকৃত অভিসন্ধি বুঝিতে পারিলেন না, ক্রমাগত বাদশাহকে লিখিতে