পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিবাজীর স্বাধীন রাজ্য স্থাপন
১১৩

সৈন্যগণ শ্রেণী ভাঙ্গিয়া হতাইয়া পড়িল। তাহাদের অগ্রগামী বিভাগের নেতা ছিলেন—বিখ্যাত পাঠানবীর ইখ্‌লাস খাঁ মিয়ানা। প্রভাত হইলে (১৭ই অক্টোবর) তিনি একটি ছোট পাহাড়ের উপর হইতে দেখিলেন যে, নীচের মাঠে মারাঠারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হইয়া তাঁহার দিকে মুখ ফিরাইয়া দাঁড়াইয়া আছে। মুঘল-সৈন্যগণ উটের পিঠ হইতে বর্ম্ম ও অস্ত্র নামাইয়া সাজ করিতে লাগিল; কিন্তু ইখ্‌লাস খাঁর বিলম্ব সহিল না, তিনি জনকতক মাত্র লোক সঙ্গে লইয়া ঘোড়া ছুটাইয়া শত্রুদের আক্রমণ করিলেন। কিন্তু মারাঠারা সংখ্যায় আট হাজার; তাহাদের বড় বড় নেতা—প্রতাপ রাও (সেনাপতি), আনন্দ রাও প্রভৃতি উপস্থিত।[১] শীঘ্রই ইখ্‌লাস খাঁ আহত হইয়া ঘোড়া হইতে পড়িয়া গেলেন। কিছুক্ষণ পরে দাউদ খাঁ আসিয়া পৌঁছিলেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে আরও সৈন্য পাঠাইয়া দিলেন। প্রাতঃকাল হইতে ছয় সাত ঘণ্টা ধরিয়া ভীষণ কাটাকাটি চলিল। মারাঠা বর্গীরা মুঘলদের চারিদিকে ঘোড়া ছুটাইয়া ঘুরিতে লাগিল যেন তাহাদের সব পথ রোধ করিবে। দাউদ খাঁর দলের অনেকে মারা গেল, অনেকে আহত হইল। কিন্তু বুন্দেলা রাজপুতদের বন্দুকের ভয়ে মারাঠারা বেশী কাছে আসিল না। অবশেষে দাউদ খাঁ স্বয়ং রণক্ষেত্রে আসিয়া তোপের সাহায্যে শত্রুদের তাড়াইয়া দিলেন এবং নিজপক্ষীয় আহত লোকজনদের উদ্ধার করিলেন।

 যখন বেলা দুই প্রহর তখন উভয় পক্ষই ক্লান্ত হইয়া যুদ্ধ স্থগিত রাখিয়া খাইতে গেল। সন্ধ্যার আগে মারাঠারা আবার আক্রমণ করিল, তাহারা আট হাজার, আর দাউদ খাঁর সঙ্গে দু হাজার মাত্র লোক, তথাপি তোপের জোরে বাদশাহী দল রক্ষা পাইল। রাত্রিতে মারাঠারা

  1. শিবাজী এই যুদ্ধে স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন না, সুতরাং কার্ম্মারকরের আধুনিক ব্রঞ্জ প্যানেল ঐতিহাসিক সত্যের বিরোধী।