পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০
শিবাজী

(ব্যাঙ্কার), বণিক, ব্যবসায়-পরিচালক, এমন কি সর্দ্দার ঠিকাদারেরও উদ্ভব হয় নাই। মারাঠা-রাজশক্তির প্রধান ত্রুটি ছিল—অর্থনীতির ক্ষেত্রে অপারকতা। ইহাদের রাজারা সর্বদাই ঋণগ্রস্ত, নিয়মিত সময়ে ও সুচারুরূপে রাজ্যের ব্যয়-নির্ব্বাহ এবং শাসনযন্ত্র ঠিক এবং দ্রুত পরিচালন করা তাঁহাদের সকলের নিকট অসম্ভব ছিল।

 কিন্তু বর্ত্তমান মারাঠারা এক অতুলনীয় সম্পদে ধনী। মাত্র তিন পুরুষ আগে তাহাদের জাতি শত শত যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুর সম্মুখীন হইয়াছিল, রাজ্যের দৌত্যকার্য্য ও সন্ধির তর্ক এবং ষড়যন্ত্রজালে লিপ্ত হইয়াছিল, রাজস্ব-চালনা আয়ব্যয় নির্ব্বাহ করিয়াছিল,সাম্রাজ্যের নানা সমস্যা সমাধানের জন্য চিন্তা করিতে বাধ্য হইয়াছিল। তাহারা যে-ভারতের ইতিহাস সৃষ্টি করিয়াছে, আমরা এখন সেই ভারতেরই অধিবাসী। এই-সব কীর্তির স্মৃতি প্রতি মারাঠার অন্তরে অবর্ণনীয় তেজের সঞ্চার করে। তীক্ষ্ণ বুদ্ধি, ধীর শ্রমশীলতা, সরল চালচলন, মানব-জীবনের সর্বোচ্চ আদর্শের অনুসরণ করিবার জন্য প্রাণের টান, যাহা উচিত বলিয়া জানি তাহা করিবই—এই দৃঢ়পণ, ত্যাগস্পৃহা, চরিত্রের দৃঢ়তা, এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সাম্যে বিশ্বাস,—এই-সব গুণে মারাঠী মধ্যবিত্ত শ্রেণী ভারতের অপর কোন জাতি হইতে কম নহে, বরং অনেকস্থলে শ্রেষ্ঠ। আহা! সেই সঙ্গে তাহাদের যদি ইংরাজদের মত অনুষ্ঠানগঠনে ও বন্দোবস্তে দক্ষতা, সকলে মিলিয়া-মিশিয়া কাজ করিবার শক্তি, লোককে চালাইবার ও বশ করিবার স্বাভাবিক ক্ষমতা, দূরদৃষ্টি, এবং অজেয় বিষয়-বুদ্ধি (common sense) থাকিত, তবে ভারতের ইতিহাস আজ অন্যরূপ হইত।