পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/১৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৮
শিবাজী

পৃথক লড়িয়া সহজেই মুসলমানের কাছে রাজ্য হারাইল অথবা বশ মানিল। এইরূপে ১৬৩৭ হইতে ১৬৫৬ সালের মধ্যে কুতুব শাহ গোলকুণ্ডার দক্ষিণ-পূর্বে অগ্রসর হইয়া কাড়াপা এবং উত্তর-আর্কট জেলা (পালার নদীর উত্তরের অংশ) এবং মাদ্রাজের সমুদ্রকুল অঞ্চলে শিকাকোল হইতে সাদ্রাজ বন্দর (মাদ্রাজের প্রায় ৫০ মাইল দক্ষিণ) পর্যন্ত দখল করিলেন। ইহার নাম হইল “হায়দারবাদী কর্ণাটক”। ঠিক ইহার দক্ষিণে,—পালার হইতে কাবেরী নদী পর্যন্ত সমভূমি এবং প্রায় সমস্ত মহীশ্বর জুড়িয়া আদিল শাহ রাজ্য বিস্তার করিলেন। তাহার নাম হইল “বিজাপুরী কর্ণাটক”।

 অর্থ শস্য ও লোকসংখ্যায় এই কর্ণাটক দেশ ভারতে প্রায় অতুলনীয় ছিল। জমি অত্যন্ত উর্ব্বরা; স্থানীয় লোকেরা খুব পরিশ্রমী ও শিল্পকার্যে দক্ষ; অনেক মণিমাণিক্যের খনি ও হাতীতে পূর্ণ বন-জঙ্গল হইতে রাজার অগাধ লাভ হইত। এই সব কারণে দেশের আয় দ্রুত বাড়িয়া চলিয়াছিল। এই আয়ের অতি কম অংশই খরচ হইত, কারণ প্রজারা খুব মিতব্যয়ী, কোন প্রকার বিলাসিতা জানিত না; পান্তাভাত ও তেঁতুলের জল, নুন লঙ্কা মিশাইয়া খাইয়া এবং লেংটি পরিয়া বারো মাস কাটাইত। এইরূপে বৎসর বৎসর কর্ণাটকে অগাধ ধন উদ্ধৃত্ত থাকিত; তাহার কতক অংশ বড় বড় মন্দির নির্মাণে ব্যয় হইত; বাকী টাকা মাটির তলে পোঁতা থাকিত। এইজন্য সোনার দেশ বলিয়া যুগে যুগে কর্ণাটক প্রদেশের খ্যাতি ছিল। যুগে যুগে বিদেশী রাজা ও সেনাসামন্তরা এই দেশের অগাধ ধনরত্ন লুঠিয়া লইয়া ফিরিয়া গিয়াছেন। এবার শিবাজীর দৃষ্টি কর্ণাটকের উপর পড়িল।

কর্ণাটকে বিজাপুরী জাগীরদারদের কলহ ও রাজনীতি

 এই সময়ে (অর্থাৎ ১৬৭৬ সালে) বর্তমান মহীশূর রাজ্যের প্রায়