পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/১৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দক্ষিণ-বিজয়
১৩৯

সমস্তটাই বিজাপুরের অধীনে অনেকগুলি খণ্ডে বিভক্ত ছিল; তাহার কতকগুলি ওমরাদের জাগীর, আর কতকগুলি করদ-হিন্দুরাজাদের রাজ্য। ইহাকে “কর্ণাটক বালাঘাট” (অর্থাৎ উঁচু জমি) বলা হইত। আর মহীশূরের পূর্ব্বদিকে বঙ্গ উপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত যে সমভূমি, অর্থাৎ মাদ্রাজের আর্কট প্রভৃতি জেলাগুলি, তাহার নাম ছিল “কর্ণাটক পাইনঘাট” (অর্থাৎ নীচু দেশ)। মহীশূরের পাহাড় বাহিয়া এই সমভূমিতে নামিলে উত্তর হইতে দক্ষিণ মুখে যাইবার পথে ক্রমে ক্রমে তিনটি বিজাপুরী ওমরাদের জাগীর পড়ে;—প্রথমে বিখ্যাত জিঞ্জি-দুর্গের অধীনস্থ প্রদেশ।(ইহার শাসনকর্তা নাসির মহম্মদ খাঁ, মৃত উজীর খাওয়াস খাঁর কনিষ্ঠ ভাতা); তাহার পর বলি-কণ্ড-পুরম (যেখানে বানর-রাজ বালি রামচন্দ্রের দর্শনলাভ করেন; ইহার শাসনকর্তা শের খাঁ লোদী, আফঘান উজীর বহলোলের জাতভাই); এবং শেষে কাবেরী পার হইয়া তাঞ্জোর (শিবাজীর বৈমাত্রেয় ভাই ব্যঙ্কাজী, ওরফে একোজী, ১৬৭৫ সালে ইহা দখল করেন)। আরও দক্ষিণে স্বাধীন মাদুরা-রাজ্য। ইহা ভিন্ন বেলুন, আরণি প্রভৃতি বিখ্যাত দুর্গগুলি ভিন্ন ভিন্ন কর্মচারীর হাতে ছিল।

 এই-সব বিজাপুরী ওমরাদের মধ্যে স্বার্থ লইয়া সর্বদাই যুদ্ধ ও রাজ্য কাড়াকাড়ি চলিতেছিল; কেহই উপরিতন সুলতানকে মানিয়া চলিত না, কারণ সুলতান তখন নাবালক এবং উজীরের হাতে পুতুল মাত্র। হিন্দু করদ-রাজারাও তেমনি স্বার্থপর ও একতাহীন। শের খাঁ ফন্দি করিলেন যে তাহার মিত্র—ফরাসী কোম্পানীর পণ্ডিচেরীর কুঠি হইতে গোরা এবং সাহেবদেব হাতে শিক্ষিত দেশী সিপাহী লইয়া তিনি জিঞ্জি অধিকার করিবেন; তাহার পর ক্রমে রাজ্য ও বল বৃদ্ধি করিয়া মাদুরা ও তাঞ্জোরের অগাধ ধনদৌলত লুঠিবেন, এবং শেষে সেই অর্থের জোরে সৈন্যসংখ্যা বাড়াইয়া গোলকুণ্ডা-রাজ্য জয় করিবেন