পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/১৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দক্ষিণ-বিজয়
১৫১

আক্রমণে অগ্রসর হইলেন। কিন্তু মারাঠারা নিজ স্থানে স্থির নিঃশব্দভাবে দাঁঁড়াইয়া শত্রুর অপেক্ষা করিতে লাগিল। এই দৃশ্য দেখিয়া শের খাঁর হৃৎকম্প উপস্থিত হইল; তিনি দেখিলেন বড়ই বিপদ। অমনি নিজ সেনাদের ফিরিতে হুকুম দিলেন। তাহারা ইহাতে আরও ভীত এবং বিশৃঙ্খল হইয়া পডিল। ঠিক সেই সুযোগে শিবাজী ঘোড়া ছুটাইয়া আসিয়া তাহাদের উপর পড়িলেন; সকলে ছত্রভঙ্গ হইয়া উদ্ধশ্বাসে পলাইল।

 শের খাঁ তিরুবাড়ীর ছোট দুর্গে ছুটিয়া গিয়া দরজা বন্ধ করিয়া দিলেন। কাঙালোরে আশ্রয় লইবার ইচ্ছায় রাত্রে তিনি সেখান হইতে বাহির হইলেন। কিন্তু মারাঠারা টের পাইয়া তাড়া করিয়া তাহাকে অকাল-নায়কের জঙ্গলে তাড়াইয়া দিল। চন্দ্র অস্ত গেলে অন্ধকারের আড়ালে বন হইতে বাহির হইযা শের খাঁ একশত মাত্র সওয়ার লইয়া (২৭ জুন) বাইশ মাইল দূরে বোনগির-পটন নামক একটি ছোট দুর্গে (ভেলার নদীর উত্তর তীরে) ঢুকিলেন। কিন্তু তাহার পাঁচ শত ঘোড়া, দুইটি হাতী, বিশটা উট এবং তাঁবু ঢাক পতাকা ও মালের বলদ মারাঠার কাড়িয়া লইল। ইহার পর কয়েক দিনের মধ্যেই শের খাঁর রাজ্যের অনেক শহর ও দুর্গ শিবাজী অবাধে দখল করিলেন। অবশেষে ৫ই জুলাই খাঁ সন্ধি করিয়া শিবাজীকে নিজের সমস্ত দেশ ছাড়িয়া দিলেন এবং নিজের মুক্তির জন্য এক লক্ষ টাকা দিতে প্রতিজ্ঞা করিলেন। এই টাকা না দেওয়া পর্যন্ত নিজপুত্র ইব্রাহিম খাঁকে জামিন-স্বরূপ শিবাজীর হাতে রাখিলেন। শিবাজী প্রতিজ্ঞা করিলেন যে শের খাঁকে পরিবারসহ অবাধে ঐ দুর্গ হইতে বাহির হইতে এবং কাডালোরে রক্ষিত তাঁহার সম্পত্তি লইয়া যাইতে দিবেন।[১]

  1. অবশেষে ১৬৭৮ সালের এপ্রিল মাসে রাজ্যহীন নিঃসম্বল শের খা মাইয়া বাজে রে আয় লইলেন।