পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/১৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৫৮
শিবাজী

বলিতেছে যে বেলবাড়ীতে তাহার যত বেশী নাকাল হইয়াছে, নাকাল অতটা তিনি মুঘল বা বিজাপুর সুলতানের হাতেও হন নাই। যিনি এত রাজ্য জয় করিয়াছেন, তিনি কিনা শেষে এক স্ত্রীলোক দেশাইকে হারাইতে পারিতেছেন না।”

বিজাপুব-লাভের চেষ্টা বিফল

 ইতিমধ্যে শিবাজী ঘুষ দিয়া বিজাপুর-দুর্গ লাভ করিবার এক ফন্দি আঁটিয়াছিলেন। ঘটনাটা এই,—উজীর বহলোল খাঁর মৃত্যু (২৩ ডিসেম্বর, ১৬৭৭)-র পর তাহার ক্রীতদাস জমশেদ খাঁ ঐ দুর্গ ও বালক রাজা সিকন্দর আদিল শাহর ভার পাইয়াছিল; কিন্তু সে দেখিল উহা রক্ষা করিবার মত বল তাহার নাই। তখন ত্রিশ লক্ষ টাকার বদলে রাজা ও রাজধানীকে শিবাজীর হাতে সঁপিয়া দিতে সম্মত হইল। এই সংবাদ পাইয়া আদোনীর নবাব সিদ্দি মাসুদ (মৃত সিদ্দি জোহরের জামাতা) গোপনে থাকিয়া প্রচার করিয়া দিলেন যে তাহার কঠিন অসুখ, অবশেষে নিজের মৃত্যু-সংবাদও রটাইলেন। এমন কি একখানা পালকীতে করিয়া যেন তাঁহারই মৃতদেহ বাক্সে পুরিয়া কয়েক হাজার রক্ষী সহ কবর দিবার জন্য আদোনী পাঠান হইল! তাঁহার অবশিষ্ট সৈন্যদল-চার হাজার অশ্বারোহী,—বিজাপুরে গিয়া জমশেদকে জানাইল, “আমাদের প্রভু মারা যাওয়ায় আমাদের অন্ন জুটিতেছে না; তোমায় চাকরিতে আমাদের লও।” সেও তাহাদের ভর্ত্তি করিয়া দুর্গের মধ্যে স্থান দিল। আর, তাহারা দুই দিন পরে জমশেদকে বন্দী করিয়া বিজাপুরের ফটক খুলিয়া দিয়া সিদ্দি মাসুদকে ভিতরে আনিল। মাসুদ উজীর হইলেন (২১ ফেব্রুয়ারি)। শিবাজী এই চরম লাভের আশায় বিফল হইবার পর পশ্চিমদিকে বাঁকিয়া নিজদেশে পনহালায় প্রবেশ করিলেন (বোধ হয় ৪ঠা এপ্রিল, ১৬৭৭)।