পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/২০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
শিবাজীর রাজ্য এবং শাসন-প্রণালী
১৯৯

 এই শিব-স্বরাজ তিন প্রদেশে বিভক্ত এবং তিনজন সুবাদারের শাসনাধীন ছিল:—

 (১) দেশ, অর্থাৎ নিজ মহারাষ্ট্র; পেশোয়ার শাসনে,

 (২) কোঁকন, অর্থাৎ সহ্যাদ্রির পশ্চিমাঞ্চল; অন্নাজী দত্তোর অধীনে,

 (৩) দক্ষিণ-পূর্ব্ব বিভাগ, অর্থাৎ দক্ষিণ-মহারাষ্ট্র এবং পশ্চিমকর্ণাটক; দত্তাজী পণ্ডের শাসনে।

 দ্বিতীয়ত, পূর্ব্ব-কর্ণাটক অর্থাৎ মাদ্রাজে (১৬৭৭-৭৮) দিগ্বিজয়ের ফলে জিঞ্জি বেলুর প্রভৃতি জেলা তাঁহার হাতে আসিয়াছিল বটে, কিন্তু সেখানে তাহার ক্ষমতা তখনও স্থায়িত্ব লাভ করিতে পারে নাই; তাঁহার সৈন্যেরা যতটুকু জমি দখলে রাখিতে বা যেখানে রাজস্ব আদায় করিতে পারিত, তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকিতে হইত; অন্য সর্ব্বত্র অরাজকতা এবং পুরাতন ছোট ছোট সামন্তদের সংঘর্ষ। মহীশূরে বিজিত স্থান কয়টিও সেই দশা। তাঁহাব মৃত্যুর পূর্ব্ব পর্যন্ত কানাড়া অধিত্যকায়, অর্থাৎ বর্তমান বেলগাঁও ও ধারোয়ার জেলায় এবং সোন্দা ও বিদনুর রাজ্যে, যুদ্ধ চলিতেছিল, সেখানে তার ক্ষমতা নিঃসন্দেহভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় নাই।

 তৃতীয়তঃ, এই-সব স্থানের বাহিরে নিকটবর্তী দেশগুলিতে তাঁহার সৈন্যেরা প্রতি বৎসর শরৎকালে গিয়া ছয় মাস বসিয়া থাকিয়া চৌথ আদায় করত। এই কর রাজার প্রাপ্য রাজার রাজস্ব নহে, ইহা ডাকাতদের খুশী রাখিবার উপায় মাত্র। ইহার মারাঠী নাম “খণ্ডনী”। অর্থাৎ “এই টাকা লইয়া আমাকে রেহাই দাও, বাবা!”) হইতেই তাহা স্পষ্ট বুঝা যায়। কিন্তু চৌথ আদায় করা সত্ত্বেও মারাঠার অপর শত্রুর আক্রমণ হইতে সেই দেশ রক্ষা করা কর্ত্তব্য বলিয়া স্বীকার করিত; তাহারা নিজেরা ঐ দেশ লুটিবে না, এইটুকু মাত্র অনুগ্রহ দেখাইত।