পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/২১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০৮
শিবাজী

“প্রজাগণ জমিদার দেশমুখ ও দেশাইদের আজ্ঞাধীন থাকিবে না; উহারা প্রজাদের উপর কোন কর্তৃত্ব করিতে পারিবে না। অন্যান্য রাজ্যে এই-সব পুরুষানুক্রমিক ভূস্বামী (মিরাসদার)-র ধন ক্ষমতা ও সৈন্যবলে বাড়িয়া প্রায় স্বাধীন হইয়া উঠিয়াছিল; অসহায় প্রজার সব তাহাদের হাতে; তাহারা দেশের রাজাকে অগ্রাহ্য করিত এবং প্রজার দেওয়া রাজকর নিজে খাইয়া রাজসরকাবে অতি কম টাকা জমা দিত। শিবাজী এই শ্রেণীর জমিদারের দর্প চূর্ণ করিলেন। মিরাসদারদের গড় ভাঙ্গিয়া দিয়া, কেন্দ্রস্থানগুলিতে নিজ সৈন্যের থানা বসাইয়া, জমিদারদের হাত হইতে সব ক্ষমতা কাড়িয়া লইয়া, তাহাদের প্রাপ্য আয় নিদিষ্ট হারে বাঁধিয়া দিয়া, প্রজাপীড়নের ও রাজস্ব-লুণ্ঠনের পথ বন্ধ করিয়া দিলেন। জমিদারদের গড-নির্মাণ নিষিদ্ধ হইল। প্রত্যেক গ্রাম-কর্মচারী নিজ ন্যায্য পারিশ্রমিক (অর্থাৎ শস্যের অংশ) ভিন্ন আর কিছু পাইবে না।” [সভাসদ]

 তেমনি জাগীরদারগণও নিজ নিজ জাগীরের মহলে শুধু খাজনা আদায় করিবেন, প্রজাদের উপর ভূস্বামী বা শাসনকর্তার মত কোন প্রকার ক্ষমতা তাহাদের নাই। কোন সৈন্য আমলা বা রায়তকে জমির উপর স্থায়ী সত্ব (মোকাসা) দেওয়া হইত না, কারণ তাহা হইলে তাহারা স্বাধীন হইয়া বিদ্রোহ সৃষ্টি করিত এবং দেশে রাজার ক্ষমতা লোপ পাইত।

 কমবেশী এক লাখ হোণ আদায়ের মহালের উপর একজন সুবাদার (বার্ষিক বেতন চারিশত হোণ) ও একজন মজমুয়দার (বেতন ১০০ হইতে ১২৫ হোণ) রাখা হইত; পালকী খরচ বাবদ সুবাদারকে আরও চারি শত হোণ দেওয়া হইত। এই সমস্ত সুবাদার জাতে ব্রাহ্মণ, এবং পেশোয়ার তত্ত্বাবধানে থাকিত। [সভাসদ]