পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/২২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ইতিহাসে শিবাজীর স্থান
২২১

হিন্দু রাজার কর্ত্তব্য। আমি তাহাই করিব।” তখন ব্রাহ্মণেরা কাঁদাকাটি করিয়া তাহার ক্ষমা পায়।

 এইরূপে ব্রাহ্মণেরা অধিক ক্ষমতা পাইয়া অব্রাহ্মণদিগের প্রতি সামাজিক অত্যাচার অবিচার করিতে লাগিল। আবার ব্রাহ্মণদের মধ্যেও একতা ছিল না। তাহাদের মধ্যে শ্রেণী (বা শাখা)-বিভাগ এবং কৌলীন্য-অভিমান লইয়া ভীষণ দলাদলি ও বিবাদ বাধিয়া গেল। পেশোয়ারা কোঁকনবাসী (“চিৎপাবন” শাখার) ব্রাহ্মণ ছিলেন। তাহারা যখন দেশের রাজা তখনও পুণা অঞ্চলে স্থানীয় (“দেশ” শাখার) ব্রাহ্মণেরা কোঁঁকনস্থদিগকে অশুদ্ধ হীন-শ্রেণীর ব্রাহ্মণ বলিয়া ঘৃণা করিত, তাহাদের সঙ্গে পঙক্তি-ভোজন করিত না। আবার চিৎপাবনেরা “কহাডে” শাখার ব্রাহ্মণদের উপর খড়গহস্ত। পেশোয়রা অপর অপর শ্রেণীর ব্রাহ্মণদের গৌরব খর্ব্ব করিবার জন্য রাজশক্তি প্রয়োগ করিতেন। গোয়া-অঞ্চল-বাসী গৌড় সারস্বত (শেবী)-শাখার ব্রাহ্মণেরা অত্যন্ত তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও কার্যদক্ষ, কিন্তু তাহাদিগকে আর সব শ্রেণীর ব্রাহ্মণের প্রায় এখানকার বাঙ্গালী ব্রাহ্মণদের মত অবজ্ঞা ও পীড়ন করিত। এইরূপে জাতের সঙ্গে জাত, এমনকি, একই জাতের মধ্যে এক শাখার সঙ্গে অপর শাখা, বিবাদ করিতে লাগিল; সমাজ ছিন্ন-ভিন্ন হইয়া গেল, রাষ্ট্রীয় একতা লোপ পাইল, শিবাজীর অনুষ্ঠান ধূলিসাৎ হইল। মারাঠারা রাজ্য হারাইয়াছে, তাহাদের ভারতব্যাপী

 প্রাধান্য লোপ পাইয়া, তাহাদের আবার বিজাতির পদানত হইতে হইয়াছে, তবুও তাহাদের চৈতন্য হয় নাই, তাহাদের মধ্যে এই জাতে নাতে বিবাদ আজও চলিয়াছে-জাতিভেদের বিষ এতই ভীষণ। রবীন্দ্রনাথ সত্যই বলিয়াছেন-“শিবাজী যে হিন্দুসমাজকে মোঘল আক্রমণের বিরুদ্ধে জয়মুক্ত করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন, আচার-