পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২২
শিবাজী

বিচারগত বিভাগ-বিচ্ছেদ সেই সমাজের একেবারে মূলের জিনিষ। সেই বিভাগমূলক ধসমাজকেই তিনি সমস্ত ভারতবর্ষে জয়ী করিবার চেষ্টা করিয়াছিলেন। ইহাকেই বলে বালির বাঁধ বাঁধা—ইহাই অসাধ্য সাধন।

 শিবাজী এমন কোনো ভাবকে আশ্রয় ও প্রচার করেন নাই যাহ। হিন্দু-সমাজের মূলগত ছিদ্রগুলিকে পরিপূর্ণ করিয়া দিতে পারে। নিজের ধর্ম বাহির হইতে পীড়িত অপমানিত হইতেছে এই ক্ষোভ মনে লইয়া তাহাকে ভারতবর্ষের সর্বত্র বিজয়ী করিবার ইচ্ছা স্বাভাবিক হইলেও তাহা সফল হইবার নহে; কারণ ধর্ম যেখানে ভিতর হইতেই পীড়িত হইতেছে, যেখানে তাহার ভিতরেই এমন সকল বাধা আছে যাহাতে মানুষকে কেবলি বিচ্ছিন্ন ও অপমানিত করিতেছে, সেখানে সেদিকে দৃষ্টিপাত মাত্র না করিয়া, এমন কি, সেই ভেদবুদ্ধিকেই মুখ্যতঃ ধর্ম্মবুদ্ধি বলিয়া জ্ঞান করিয়া, সেই শতদীর্ণ ধর্ম্মসমাজের স্বরাজ্য এই সুবৃহৎ ভারতবর্ষে স্থাপন করা কোনো মানুষেরই সাধ্যায়ত্ত নহে, কারণ তাহা বিধাতার বিধানসঙ্গত হইতে পারে না।”

দ্বিতীয় কাবণ-নেশন-গঠনের চেষ্টার অভাব

 মারাঠা-প্রাধান্যের সময় নেশনের শিক্ষা ও অর্থবল, একতা ও সঙ্ঘবদ্ধ উদ্যম বৃদ্ধি কবিবার কথা স্থিরমনে ভাবা হইত না, তাহার জন্য দৃঢ় চেষ্টা হইত না; সব লোক নির্বিচারে পূর্বপ্রথা অনুসরণ করিত, হিন্দু জগৎ যেন চোখ বুজিয়া কালস্রোতে ভাসিয়া চলিত। আর ইউরোপের জাতিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ভাবিয়া, খাটিয়া, প্রচার করিয়া, অবিরাম উন্নতির পথে অগ্রসর হইতেছিল; এইরূপ এক ক্রমোন্নতিশীল সব জাতিয় সহিত সংঘর্ষ হইবামাত্র বিশাল মারাঠা-সাম্রাজ্য চুর্ণ হইয়া গেল। ইহাই প্রকৃতির বিধান।