পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ইতিহাসে শিবাজীর স্থান
২২৫

করিতেছে। অন্যান্য মারাঠা নেতারা এইরূপ উচ্ছৃঙ্খল, স্বার্থে অন্ধ, জাতীয়তার কর্তব্যজ্ঞানহীন ছিল বলিয়াই, শিবাজীর সমস্ত চেষ্টার ফল তাঁহার অবর্তমানে পণ্ড হইল; তিনি যে মহৎ কাজের সূচনা করিয়া যান তাহ স্থায়ী করা, জাতীয় দেহ গড়িয়া তোলা সম্ভব হইল না।

পঞ্চম কারণ-অর্থনৈতিক অবনতি

 মারাঠা-শাসনের প্রধান দোষ ছিল অর্থনীতির অবহেলা। কৃষিবাণিজ্যের উন্নতি, প্রজা ও দোকানদারদিগকে অত্যাচার হইতে রক্ষা ও ঘুষ বন্ধ করা, সুনিম্মিত ও সুরক্ষিত পথঘাট, বিচারালয়ে বিবাদের সত্বর সুবিচার, স্থায়িভাবে দেশের ধন-বৃদ্ধি এবং তাহার দ্বারা রাজ্যের শক্তির উন্নতি,—ইহার কোনটির দিকেই রাজা-উজারের দৃষ্টি ছিল না। তাহাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল “মুলুগিরি” অর্থাৎ পর-রাজ্য লুঠ করিয়া ধন-দৌলত আনা; তাহাতেই তাহাদের সমস্ত চিন্তা, সমস্ত চেষ্টা, সমস্ত লোকবল ব্যয় হইত। ইহার ফলে মারাঠারা অন্য সব লোকের-হিন্দু মুসলমান, রাজপুত জাঠ, কানাড়ী বাঙ্গালী,—দক্ষিণ প্রাপ্ত হইতে উত্তর প্রান্ত পর্যন্ত সমগ্র ভারত জুড়িয়া রাজা-প্রজার, পীড়ক[১]ও শত্রু হইল, - জগতে এক জনও বন্ধ রাখিল না। এই অন্ধ ও অসৎ রাজনীতি অনুসরণের ফলে মারাঠাদের পতনের জন্য সকলেই ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করিতে লাগিল। আর, তাহাদেরবারংবার লুণ্ঠনের ফলে দেশের সর্বত্রই ধনাগম বন্ধ হইল, কৃষি বাণিজ্যে দ্রুত অবনতি হইতে লাগিল, অনেক উর্বর ক্ষেত্র জঙ্গলে পরিণত এবং সমৃদ্ধ শহর দন্ধ ভগ্ন জনহীন হইল; লোকে অর্থ সঞ্চয় করিবার, অর্থ বুদ্ধি করিবার চেষ্টা ছাড়িয়া দিল। শেষে এমন হইল যে মারাঠারা আসিয়া পূর্বের চৌথের দশমাংশও পাইত না। কেবলমাত্র

  1. একজন বাঙ্গালী কবি সংস্কৃতে বগীদিগকে “কৃপায় কৃপণ, গর্ভবতী ও শিশুর পীড়ক” বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন (১৭৪৩ সাল)।