পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/২৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ইতিহাসে শিবাজীর স্থান
২২৯

শক্তিমান মুঘল-সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে দাড়াইতে সমর্থ হয় নাই; সকলেই পরাজিত নিষ্পেষিত হইয়া লোপ পাইয়াছিল। তাহা দেখিয়াও এই সাধারণ জাগীরদারের পুত্র ভয় পাইল না, বিদ্রোহী হইল, এবং শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করিল। ইহার কারণ—শিবাজীর চরিত্রে সাহস ও স্থির চিতার অপূর্ব সমাবেশ হইয়াছিল; তিনি নিমিষে বুঝিতে পারিতেন, কোন ক্ষেত্রে কতদুর অগ্রসর হওয়া উচিত, কোথায় থামিতে হইবে-সময় কোন নীতি অবলম্বন করা শ্রেয়,—এই লোক ও অর্থবলে ঠিক কি কি করা সম্ভব। ইহাই সর্বোচ্চ রাজনৈতিক প্রতিভার পরিচায়ক। এই কার্যদক্ষতা ও বিষয়-বন্ধিই তাঁহার জীবনের আশ্চর্য সফর সবপ্রধান কারণ।

 শিবাজীর রাজ্য লোপ পাইয়াছে; তাহার বংশধরগণ আজ জমিদার মাত্র। কিন্তু মারাঠা জাতিকে নবজীবন দান তাঁহার অমর কীর্তি। তাহার জীবনের চেষ্টার ফলে সেই বিক্ষিপ্ত পরাধীন জাতি এক হইল, নিজ শক্তি বুঝিতে পারিল, উন্নতির শিখরে পেীছিল। ফলত, শিবাজী হিন্দু জাতির সর্বশেষ মৌলিক গঠন-কর্তা এবং রাজনীতি ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ কর্মবীর। তাহার শাসন-পদ্ধতি, সৈন্য-গঠন, অনুষ্ঠান-চনা সবই নিজের সৃষ্টি। রণজিৎ সিংহ বা মাহাদী সিন্ধিয়ার মত তিনি ফরাসী সেনাপতি বা শাসনকর্তার সাহায্য লন নাই। তাহার রাজ্য-ব্যবস্থা দীর্ঘকাল স্থায়ী হইয়াছিল, এবং পেশোয়াদের সময়েও আদর্শ বলিয়া গণ্য হইত।

 নিরক্ষর গ্রাম্য বালক শিবাজী কত সামান্য সম্বল লইয়া, চারিদিকে কত বিভিন্ন পরাক্রান্ত শত্রুর সঙ্গে মুখিয়া, নিজেকেসঙ্গে সঙ্গে সময় মারাঠা জাতিকে—স্বাধীনতার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেন, তাহা এই গ্রন্থে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করা হইয়াছে। সেই আদি যুগের পাল