পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০
শিবাজী
২০

কাটিয়া ফেলিতে যাইতেছিলেন, এমন সময় সকলে ধরিয়া তাঁহাকে থামাইল। ইহার পর হইতে তিনি অপরাধের চিহ্নস্বরূপ একটি লোহার শিকল গলায় পরিয়া থাকিতেন।

 শিবাজী লিখিতে পড়িতে জানিতেন না, কিন্তু তাহাতে তাঁহার ক্ষতি হয় নাই। আকবর, হাইদার আলী, রণজিৎ সিংহ—ভারতের এই তিনজন কর্ম্মীশ্রেষ্ঠ রাজাও নিরক্ষর ছিলেন। সে সময়টা মধ্যযুগ, অধিকাংশ লোকই অশিক্ষিত; তখনকার দিনে এই পুঁথিগত বিদ্যার অভাব তাঁহার মনকে অন্ধকার অকর্মণ্য করিয়া রাখে নাই, অথবা তাঁহার কার্য্যদক্ষতা হ্রাস করে নাই। কারণ, শিবাজী রামায়ণ মহাভারতের গল্প এবং পুরাণ-পাঠ ও কীর্ত্তন শুনিয়া শুনিয়া প্রাচীন ভারতের জ্ঞান ধর্ম্ম কত কাব্য-কাহিনীর আস্বাদ পান, রাজনীতি, ধর্ম্মনীতি, রণকৌশল ও শাসন-বিধান শেখেন। যেখানে কীর্ত্তন হইত সেখানে তিনি যাইতেন এবং তন্ময় হইয়া শুনিতেন; কোন হিন্দু-সন্ন্যাসী বা মুসলমান পীরের আগমন হইলে তিনি তাঁহার কাছে গিয়া ভক্তি দেখাইতেন এবং ধর্ম্মের উপদেশ লইতেন। কাজেই শিক্ষার প্রকৃত ফল তাঁহাতে সম্পূর্ণভাবে ফলিয়াছিল।

মাব্‌লে জাতি

 পুণা জেলার পশ্চিম প্রান্তে সহ্যাদ্রি পর্ব্বতের গা বাহিয়া ৯০ মাইল লম্বা এবং ১২ হইতে ২৪ মাইল প্রশস্ত যে ভূমিখণ্ড আছে, তাহার নাম ‘মালব’[১] অর্থাৎ সুর্য্যাস্তের দেশ বা পশ্চিম। এই অঞ্চলটি অত্যন্ত অসমান, অধিত্যকার পর অধিত্যকা, আর তাহাদের ধারগুলি খাড়া


  1. মারাঠী ভাষায় ‘মাবলনো (infinitive) ক্রিয়াপদ, অর্থ ‘অস্ত যাওয়া’। পর্ব্বত গাত্রের এই দেশকে উত্তরে (অর্থাৎ বগলানায়) ‘ডাঙ্গ’, মধ্যভাগে (অর্থাৎ নিজ মহারাষ্ট্রে) ‘মাবল’ এবং দক্ষিণ অর্থাৎ কর্ণাটকে ‘মল্লাঢ়’ বলা হয়।