পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মুঘল ও বিজাপুরের সহিত প্রথম যুদ্ধ
৪১

হইতে সন্ধান লইলেন, “খাঁ এরূপ বন্দোবস্ত করিয়াছেন যে, সাক্ষাতের সময় তিনি শিবাজীকে বন্দী করিবেন, কারণ শিবাজীর মত ধূর্ত্তকে যুদ্ধে বশ করা অসম্ভব।” এই-সব কথা শুনিয়া শিবাজী যাহাতে আফজলকে বধ করিয়া আত্মরক্ষা করিতে পারেন, তাহার জন্য প্রস্তুত হইলেন।

 তাহার পর শিবাজী জানাইলেন যে,খাঁর সহিত সাক্ষাৎ করিয়া তিনি সন্ধি স্থির করিতে সম্মত, কিন্তু বাই নগরে যাইতে ভয় পাইতেছেন; প্রথমে খাঁ তাঁহার বাড়ীর কাছে আসিয়া দেখা করিয়া তাঁহাকে অভয় দিন, তাহার পর তিনি খাঁর শিবিরে যাইবেন।

সাক্ষাতের স্থানে আফজল ও শিবাজীর আগমন

 আফজল রাজি হইলেন। উভয়ের সাক্ষাতের জন্য প্রতাপগড় দুর্গের কিছু নীচে একটি পাহাড়ের মাথার উপর তাবু খাঁটান হইল, এবং বন কাটিয়া সেখানে যাইবার পথ প্রস্তুত করা হইল। আফজল খাঁ সসৈন্য বাই হইতে কুচ করিয়া মহাবালেশ্বর অধিত্যকার ভিতর দিয়া “পার” নামক গ্রামে আসিয়া ছাউনি করিলেন। গ্রামটি প্রতাপগড়ের এক মাইল দক্ষিণে, নীচের সমতলভূমিতে। তাঁহার সৈন্যগণ কয়না নদীর ধারে গভীর উপত্যকায় চারিদিকে আশ্রয় লইল।

 সাক্ষাতের নির্দ্দিষ্ট দিনে (১০ই নবেম্বর, ১৬৫৯) আফজল খাঁ প্রথমে পার গ্রামের শিবির হইতে এক হাজার বন্দুকধারী রক্ষী লইয়া, পালকীতে চড়িয়া প্রতাপড়ের পাহাড়ে উঠিতে লাগিলেন। পন্তাজী গোপীনাথ বলিলেন যে এত সৈন্য দেখিয়া শিবাজী, ভয় পাইবেন এবং সাক্ষাৎ করিতে আসিবেন না, সুতরাং খাঁ আর-সকলকে বিদায় দিয়া মাত্র দুইজন রক্ষী লইয়া উপরে উঠুন। তাহাই করা হইল। আফজলের সঙ্গে চলিল— দুইজন সৈনিক, বিখ্যাত তলোয়ায়-বাজ বীর সৈয়দ বান্দা, এবং দুই পক্ষের দুইজন ব্রাহ্মণ দূত, অর্থাৎ পন্তাজী ও কৃষ্ণাজী।