পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪২
শিবাজী
৪২

 যে তাঁবুতে উভয়ের মিলনের ব্যবস্থা হইয়াছিল তথায় পৌঁছিয়া সেখানকার মহামূল্য সাজসজ্জা ও বিছানাপত্র দেখিয়া আফজল রাগিয়া বলিলেন, “কি! সামান্য জাগীরদারের ছেলের এত আড়ম্বর। কিন্তু পন্তাজী তাঁহাকে বুঝাইয়া দিলেন যে, এসব দ্রব্য সন্ধির উপহারস্বরূপ বিজাপুর-রাজকে দিবার জন্য আনা হইয়াছে।

 তখন শিবাজীকে ডাকিবার জন্য প্রতাপগড়ে লোক পাঠান হইল। তিনি জামার নীচে লুকাইয়া লোহার জালের বর্ম এবং মাথার পাগড়ীর নীচে হোট কড়াইএর মত ইস্পাতের টুপী পরিলেন। বাহির হইতে দেখিলে বুঝিবার যো নাই যে, তাঁহার শরীরে কোন অস্ত্র লুকান আছে; কিন্তু তাঁহার বাম হাতের আঙ্গুলে কড়া দিয়া লাগান ‘বাঘনখ’ নামক তীক্ষ্ণ বাঁকা ইস্পাতের নখগুলি মুঠির মধ্যে লুকান ছিল, আর ডান হাতের আস্তিনের নীচে ‘বিছুয়া নামক সরু ছোরা ঢাকা ছিল। তাঁহার সঙ্গে দুইজন শরীর-রক্ষক—জীব মহালা নামক নাপিত (তলোয়ার-খেলায় দক্ষ) এবং শম্ভুজী কাব্‌জী; উভয়েই অসমসাহসী, ক্ষিপ্রহস্ত ও তেজীয়ান পুরুষ। ইহাদের প্রত্যেকের হস্তে দুইখানা তরবারি ছিল। প্রতাপগড় দুর্গ হইতে নামিবার সময় শিবাজী মাতার চরণে প্রণাম করিয়া বিদায় চাহিলেন। শুক্লবসনা দেবী-প্রতিমা জীজা বাঈ আশীর্ব্বাদ করিলেন, “তোমার জয় হউক”,এবং শিবাজীর সঙ্গিগণকে বিশেষ করিয়া বলিয়াছিলেন, “আমার পুত্রকে রক্ষা করিও।” তাহারা উৎসাহে প্রতিজ্ঞা করিল—“তাহাই করিব।”

আফজল খাঁর সহিত কাটাকাটি

 প্রতাপগড় দুর্গ শিখর হইতে নামিয়া শিবাজী তাঁহার তাঁবুর দিকে কিছু দূর ধীরে ধীরে যাইবার পর, হঠাৎ থামিয়া দাঁড়াইলেন এবং বলিয়া পাঠাইলেন যে, সৈয়দ বান্দাকে সাক্ষাতের স্থান হইতে সরাইয়া দিতে