পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৬
শিবাজী

দক্ষিণে অগ্রসর হইয়া কোলাপুর জেলা আক্রমণ করিলেন, পন্‌হালা দুগ হস্তগত করিয়া (২৮এ নবেম্বর), রুস্তম্-ই জমানের অধীনে অপর একটি বিজাপুরী সৈন্যদলকে পরাস্ত করিলেন (২৮এ ডিসেম্বর)। আর তাহার পর জানুয়ারি মাসে দক্ষিণ-কোঁকনে রত্নগিরি জেলায় প্রবেশ করিয়া অনেক বন্দর ও গ্রাম লুটিলেন।

আফজল খাঁর মৃত্যু সম্বন্ধে গান ও গল্প

 আফজল খাঁর ভীষণ পরিণাম দেশময় আলোচনা ও গল্পের সৃষ্টি করিয়াছিল। “অজ্ঞানদাস” ছদ্মনাম বা ভণিতাধারী একজন কবি মারাঠ ভাষায় এ ঘটনা সম্বন্ধে একটি অত্যন্ত তেজপূর্ণ পোবাড়া (ব্যালাড) রচনা করেন, তাহা এখনও জনসাধারণের খুব প্রিয়। আউন্ধের রাজা বালাসাহেব পন্ত প্রতিনিধি ইদানীং ঐ ঘটনা লইয়া একটি গীতিক_ লিখিয়াছেন। কিন্তু এই ‘ব্যালাড’ ঐতিহাসিক সত্য অনুসরণ করে নাই, শুধু সুখপাঠ্য কিংবদন্তী ও কাল্পনিক শাখাপল্লবে পূর্ণ,—যেন মহাভারতের একটি দ্বন্দ্বযুদ্ধ।

 মারাঠা দেশে প্রবাদ আছে, যখন আফজল বিজাপুর হইতে শিবাজীর বিরুদ্ধে রওনা হন, তখন নানা অশুভ ঘটনা ঘটিয়াছিল—তাঁহার পতাকা ভাঙ্গিয়া পড়িয়া যায়, বড় হাতীটা অগ্রসর হইতে চাহে নাই, ইত্যাদি। আর তিনি মৃত্যু নিশ্চিত জানিয়া রওনা হইবার পূর্ব্বেই নিজের ৬৩ জন স্ত্রীকে খুন করিয়া একই চবুতরার নীচে সমান দূরে দূরে তাহাদের কবর দিয়া মনের শঙ্কা মিটাইয়াছিলেন। বিজাপুর শহরের কয়েক মাইল বাহিরে আফজলপুরা নামক স্থানে খাঁর বাড়ী ও চাকর-বাকরের বসতি ছিল। স্থানটি এখন জনমানবহীন শ্মশানে পরিণত হইয়াছে; শুধু ভাঙ্গা দেওয়াল পরিখা ও বন-জঙ্গল ও দূরে চাষের ক্ষেত্র দেখা যায়। তাঁহার মৃত্যুর ১৪ বৎসর মাত্র পরে ফরাসী-পর্য্যটক আরে কারে ঐখানে আসিয়া দেখেন