পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাঁচ বৎসর ধরিয়া যুদ্ধ, ১৬৬০-১৬৬৪
৫৯

 ফলতঃ,দেশের সর্ব্বত্র লোকেরা বলাবলি করিতে লাগিল যে, শিবাজী যশোবন্তের সহিত যুক্তি করিয়া এই কাণ্ড করিয়াছেন। ইংরাজ-বণিকেরাও এই দুর্নামের কথা লিখিয়া গিয়াছে। কিন্তু শিবাজী নিজের অনুচরদিগকে বলিতেন, “আমি যশোবন্তেরর কথায় এ কাজ করি নাই, আমার পরমেশ্বর আমাকে ইহা করাইয়াছেন।”

 মহারাষ্ট্রে থাকা মোটই নিরাপদ নহে দেখিয়া, লজ্জা ও শোকে অভিভূত শায়েস্তা খাঁ আওয়ঙ্গাবাদে উঠিয়া আসিলেন। তাঁহার অসাবধানতা ও অকর্ম্মণ্যতার ফলেই এই বিপদ ঘটিয়াছে ভাবিয়া বাদশাহ শাস্তিস্বরূপ মাতুল শায়েস্তা খাঁকে বাঙ্গলায় বদলি করিলেন, কারণ তখন বাঙ্গলার নাম ছিল “রুটিপূর্ণ নরক”। বাঙ্গলা যাইবার পথে বাদশাহের সহিত দেখা করিতে পর্য্যন্ত শায়েস্তা খাঁকে নিষেধ করা হইল। ১৬৬৪ সালের জানুয়ারীর প্রথমে কুমার মুয়জ্জম্ (শাহ আলম্) দাক্ষিণাত্যের সুবাদার হইয়া রাজধানী আওরঙ্গাবাদে পৌঁছিলেন এবং শায়েস্তা খাঁ বাঙ্গলার দিকে রওনা হইলেন। এই বদলির সুযোগে শিবাজী অবাধে মনের সুখে সুরত বন্দর লুঠ করিলেন (৬-১০ই জানুয়ারী)।

সুরত বন্দরের বর্ণনা

 ভারতের পশ্চিমে সাগর-কুল হইতে বাৱে মাইল দূরে তাপ্তী নদীর তীরে সুরত নগর। অনেক আগে এখানে বড় বড় জাহাজের যাতায়াত হিল, কিন্তু এখন নদীর মুখ এই শহর হইতে ছয় সাত ক্রোস পশ্চিমে সরিয়া গিয়াছে, কাজেই সমুদ্রগামী জাহাজগুলি সেই মুখের কাছে, সুহায়িলী (ইংরাজী Swally Hole) নামক স্থানে নোঙ্গর করিয়া থাকে, আর অপেক্ষাকৃত ছোট জাহাজ ও নৌকা নদী উজাইয়া সুরতে আসে। তবুও, সুরত মুঘল-ভারতে সর্ব্বপ্রধান বন্দর ছিল। বাণিজ্যের মাশুলের আয়ে এবং ধনরত্নে এক দিল্লী ভিন্ন আর কোন নগর ইহার সমকক্ষ ছিল