পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০
শিবাজী

না। প্রাচীন হিন্দুযুগে ইহার কিছু উত্তরে নর্ম্মদার মুখের কাছে ভারুকচ্ছ (বর্ত্তমান ভরোচ, প্রাচীন গ্রীক নাম বার্‌গজা) শ্রেষ্ঠ বন্দর বলিয়া খ্যাতিলাভ করিয়াছিল বটে, কিন্তু সেদিন চলিয়া গিয়াছে। ইহা ভিন্ন সুরত হইতে মক্কা-মদিনার যাত্রী লইয়া জাহাজ হাড়িত; এজন্য ইহার নাম ছিল “ইসলামের পুণ্য তীর্থের দ্বার”। এখান হইতেই ভারতীয় মুসলমানগণ আরব দেশের জন্য তীর্থযাত্রা করিতেন।

 সুরতের দুই অংশ, একটি দুর্গ ও অপরটি শহর। দুর্গটি ছোট ও সুরক্ষিত। কিন্তু শহরটি চারি বর্গমাইল বিস্তৃত, ধনেজনে পরিপূর্ণ। লোকসংখ্যা দুই লক্ষ; বাণিজ্য-দ্রব্যের মাশুল হইতে রাজকোষে বৎসরে বারো সক্ষ টাকা আয় হইত, অর্থাৎ আমদানী জিনিসের মূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ছিল। এ সময়ে শহরের চারিদিকে প্রাচীর ছিল না, শুধু স্থানে স্থানে বাহির হইতে আসিবার রাস্তার মুখে সামান্য রকমের ফটক এবং কোথাও কোথাও শুস্ক পরিখা ছিল, তা সহজেই পার হওয়া যাইত।

 সুরত শহরের ধনরত্নের তুলনা ভারতের অন্যত্র পাওয়া কঠিন। এই নগরে এক বহরজী বোরার সম্পত্তির পরিমাণই আশী লক্ষ টাকা, তাহার পর হাজী সাইদ্ বেগ ও অন্য বণিকদের ত কথাই নাই। অথচ শহর রক্ষার বন্দোবস্ত মোটই ছিল না। শহরের শাসনকর্ত্তা পাঁচশত রক্ষী সৈন্যের বেতন রাজদরবার হইতে পাইতেন বটে, কিন্তু লোকজন রাখিতেন না,টাকাটা নিজের সুখের জন্য ব্যয় করিতেন। নগরবাসিগণও শান্তিপ্রিয়, দুর্ব্বল এবং ভীরু, অধিকাংশই অহিংস জৈন, শুচিবাইগ্রস্ত অগ্নি-উপাসক পারসী, অথবা অর্থপ্রিয় দোকানী এবং নিরীহ গুজরাতী কারিগর। ইহারা আত্মরক্ষার জন্য কি যুদ্ধ করিবে? মহাধনী ভারতীয় বণিকগণও নিজ সম্পত্তির সহস্রাংশ ব্যয় করিয়া চৌকিদার এবং সিপাহী