পাতা:শিবাজী - যদুনাথ সরকার.pdf/৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাতীয় শ্রমশীলতা ও সরলতা

 যে দেশের অবস্থা এরূপ, সেখানে কেহই অলস থাকিতে পারে না। প্রাচীন মহারাষ্ট্রে কেহই অকর্মণ্য ছিল না—কেহই পরের পরিশ্রমের ফলে জীবিকা নির্ব্বাহ করিত না; এমন কি গ্রামের জমিদারও (পাটেল বা প্রধান) শাসনকার্য পরিচালনা করিয়া নিজের অন্ন উপার্জ্জন করিতেন। দেশে ধনীর সংখ্যা খুব কম ছিল, এবং তাহারা ব্যবসায়ীশ্রেণীর। জমিদারগণেরও যে গৌরব ছিল তাহা ততটা মজুত টাকার জন্য নহে, যতটা শস্য ও সৈন্য-সংগ্রহের জন্য।

 এরূপ সমাজে প্রত্যেক স্ত্রী-পুরুষ কায়িক পরিশ্রম করিতে বাধ্য; সৌখিনতা ও কোমলতার স্থান এখানে নাই। প্রকৃতিদেবীর কঠোর শাসনে সকলকেই কোনমতে সাদাসিদে ধরণে সংসার চালাইতে হইত; সুতরাং তাহাদের মধ্যে বিলাসিতা, অনন্যমনে জ্ঞান বা সুকুমার শিল্পের চর্চ্চা, এমন কি ভব্যতা পর্যন্ত অসম্ভব ছিল। উত্তর-ভারতে মারাঠাপ্রাধান্যের সময় এই বিজেতাদের ব্যবহার দেখিয়া বোধ হইত—তাহারা অহঙ্কারী হঠাৎ বড়লোক, কোমলতা ও ভব্যতাহীন, এমন কি বর্ব্বর। তাহাদের প্রধান ব্যক্তিরাও শিল্পকলা, সামাজিকতা, এবং সৌজন্যের দিকে দৃষ্টিপাত করিত না। ভারতের অনেক প্রদেশে অষ্টাদশ শতাব্দীতে মারাঠা রাজা হইয়াছিল সত্য, কিন্তু তাহারা কোন সুন্দর অট্টালিকা, মনোহর চিত্র বা কারুকার্যময় পুঁথি প্রস্তুত করায় নাই।

মারাঠা চরিত্র

 মহারাষ্ট্র দেশ শুষ্ক ও স্বাস্থ্যকর; এরূপ জলবায়ুর ও কম নয়। এই কঠিন জীবনের ফলে মারাঠা-চরিত্রে আত্মনির্ভরতা,সাহস, অধ্যবসায়, কঠোর আড়ম্বরশূন্যতা, সাদাসিদে ব্যবহার, সামাজিক সাম্য, এবং প্রত্যেক মানবেরই আত্মসম্মানবোধ এবং স্বাধীনতাপ্রিয়তা,—এই-সব